ইসলামের কন্ঠইসলামের কন্ঠ
সম্পাদকীয়আর্কাইভআমাদের পরিচিতিলেখা পাঠানোর নিয়মাবলীযোগাযোগের মাধ্যম
হাদীস শরীফ

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই-বোন ও চাচা-ফুফুগণ

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোন সহোদর ভাই-বোন ছিলেন না। তাই ভাই-বোন বলতে তাঁর চাচাতো ভাই-বোন এবং ফুফাতো ভাই-বোন উদ্দেশ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বেশিরভাগ ভাই-বোনদের নাম ইতিহাসে সংরক্ষিত আছে। কতিপয়ের নাম হারিয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচাদের মধ্যে কুছাম, দ্বিরার, মুস'আব এবং মুগিরা বিয়ে করার আগেই মারা যান। অথবা বিয়ে করে থাকলেও তাঁদের সন্তানাদি হয়নি। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) পিতা আব্দুল্লাহকে বাদ দিলে বাকি থাকেন ৭ জন চাচা।

হাফিজ মাওলানা মারজান আহমদ চৌধুরী
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই-বোন ও চাচা-ফুফুগণ

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই-বোন

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোন সহোদর ভাই-বোন ছিলেন না। তাই ভাই-বোন বলতে তাঁর চাচাতো ভাই-বোন এবং ফুফাতো ভাই-বোন উদ্দেশ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বেশিরভাগ ভাই-বোনদের নাম ইতিহাসে সংরক্ষিত আছে। কতিপয়ের নাম হারিয়ে গেছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচাদের মধ্যে কুছাম, দ্বিরার, মুস'আব এবং মুগিরা বিয়ে করার আগেই মারা যান। অথবা বিয়ে করে থাকলেও তাঁদের সন্তানাদি হয়নি। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) পিতা আব্দুল্লাহকে বাদ দিলে বাকি থাকেন ৭ জন চাচা। এদের সন্তানাদি ছিলেন। তবে সবার নাম আমাদের জানা নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জ্ঞাত চাচাতো ভাই-বোনদের নাম নিম্নরূপ-

★ হারিস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ৩ জন পুত্রের নাম আমরা নিশ্চিতভাবে জানি।

১. উবায়দাহ ইবনে হারিস (রা.)। তিনি প্রাথমিক যুগের মুসলিম। বদর যুদ্ধের সূচনালগ্নে সংঘটিত মুবারাযা বা মুখামুখি যুদ্ধে তিনি কুরাইশ বাহিনীর অন্যতম নেতা উতবা ইবনে রাবি'আ মতান্তরে শাইবা ইবনে রাবি'আর মুখামুখি হন এবং গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শাহাদত বরণ করেন।

২. নওফেল ইবনে হারিস (রা.)। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহন করেন। হুনায়েন যুদ্ধে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী ছিলেন।

৩. আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস (রা.)। তিনি সেই বিখ্যাত আবু সুফিয়ান নন; তিনি অন্য আবু সুফিয়ান। ইসলাম-পূর্ব যুগে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বন্ধু ছিলেন। ইসলাম আসার পর তিনি আল্লাহর নবী (সা.)-এর ঘোরতর শত্রুতে পরিণত হন। মাক্কী জীবনে তাঁর কথাবার্তায় রাসুলুল্লাহ (সা.) খুব ব্যথিত হয়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি ইসলাম গ্রহন করেন।

★ যুবায়ের ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ১ পুত্র এবং ১ কন্যার নাম আমরা জানি।

১. আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.)। তিনি সেই বিখ্যাত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের নন; তিনি অন্য আব্দুল্লাহ। তিনি অনেক পরে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। আজনাদাইন যুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করেন।

২. দ্বাবা'আ বিনতে যুবায়ের (রা.)। তিনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তবে কখন, তা আমাদের জানা নেই।

★ আবু তালিব ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ৪ জন পুত্র এবং ১ জন কন্যার নাম আমরা জানি।

১. তালিব ইবনে আবি তালিব। তিনি ইসলাম গ্রহন করেননি।

২. আকীল ইবনে আবি তালিব (রা.)। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। কারবালার অন্যতম নায়ক, হোসাইন (রা.)-এর বন্ধু মুসলিম ইবনে আকীল তাঁর পুত্র।

৩. জা'ফর ইবনে আবি তালিব (রা.)। তিনি প্রাথমিক যুগের মুসলিম এবং বিখ্যাত সাহাবি। আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন জা'ফর (রা.)। মু'তার যুদ্ধে অমিত বীরত্বে লড়াই করে তিনি শাহাদত বরণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন।

৪. আমিরুল মু'মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)। তাঁর কোন পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন নেই। মুসলমান মাত্রই আলী (রা.)-এর সাথে পরিচিত।

৫. উম্মে হানি বিনতে আবি তালিব (রা.)। তিনিও প্রাথমিক যুগের মুসলিম। একটি মতানুসারে, তাঁর ঘরে ঘুমিয়ে থাকাকালীন আল্লাহর নবী (সা.)-এর কাছে জিবরাইল (আ.) মি'রাজের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন।

★ মুকাউওয়াম ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ১ জন কন্যার নাম আমরা জানি।

১. আরওয়াহ বিনতে মুকাউওয়াম (রা.)। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহন করেন।

★ আবু লাহাব ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ৩ জন পুত্র এবং ১ জন কন্যার নাম আমরা জানি।

১. উতবা (রা.) ইবনে আবি লাহাব। ইসলাম-পূর্ব যুগে তাঁর সাথে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দ্বিতীয় কন্যা রুকাইয়া (রা.)-এর বিবাহ দিয়েছিলেন। ইসলাম আসার পর পাপিষ্ঠ আবু লাহাব হিংসাবশত রুকাইয়া (রা.)-কে তালাক দেয়ার জন্য উতবাকে চাপ দেয়। চাপে নত হয়ে উতবা তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেন। তবে তিনি স্ত্রী কিংবা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে কোনরূপ খারাপ আচরণ করেননি। শেষপর্যন্ত তিনি ইসলাম গ্রহন করেন।

২. উতাইবা ইবনে আবি লাহাব। বনু হাশিমের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হচ্ছে উতাইবা। ইসলাম-পূর্ব যুগে তার সাথে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তৃতীয় কন্যা উম্মে কুলছুম (রা.)-এর বিবাহ হয়। ইসলাম আসার পর পাপিষ্ঠ আবু লাহাব উম্মে কুলছুম (রা.)-কে তালাক দেয়ার জন্য উতাইবাকে চাপ দেয়। বড় ভাই উতবা যদিও কোন খারাপ আচরণ করেননি, কিন্তু উতাইবা খুব খারাপ আচরণ করেছিল। সে উম্মে কুলছুম (রা.)-কে কষ্ট দিয়েছিল। এমনকি ধৃষ্টতার সীমা অতিক্রম করে সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুখে থুথু দিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বদদু'আ করেছিলেন। কয়েক বছর পর এক ব্যবসায়ীক সফরে যাওয়ার সময় সিংহের আক্রমণে উতাইবা নিহত হয়।

৩. মু'তাব (রা.) ইবনে আবি লাহাব। তিনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তবে কখন, তা আমাদের জানা নেই।

৪. দুররা (রা.) বিনতে আবি লাহাব। আশ্চর্য হলেও সত্য, পাপিষ্ঠ দম্পতি আবু লাহাব এবং উম্মে জামিলের কন্যা হয়েও দুররা (রা.) প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তাঁর স্বামী মারা গেলে তিনি মদীনায় হিজরত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর "হ্যান্ডসাম" সাহাবি দিহয়া আল কালবী (রা.)-এর সাথে চাচাতো বোন দুররা (রা.)-এর বিবাহ দেন।

[যদিও পূর্ণাঙ্গ নামের শেষে রাদ্বিআল্লাহু আনহু/আনহা যুক্ত করা হয়, কিন্ত অভিশপ্ত আবু লাহাবের নাম যুক্ত থাকায় তার সন্তানদের ক্ষেত্রে আমরা এর ব্যতিক্রম করলাম]

★ হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.)-এর ১ পুত্র এবং ১ কন্যার নাম আমরা নিশ্চিতভাবে জানি।

১. ইয়ালা ইবনে হামযা (রা.)। তিনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তবে কখন, তা আমাদের জানা নেই।

২. উমামা বিনতে হামযা (রা.)। এই শিশুকন্যা ইসলাম গ্রহন করে মক্কায় রয়ে গিয়েছিলেন। পিতার সাথে মদীনায় হিজরত করেননি। ৭ম হিজরিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) উমরাতুল কাযা আদায় করে মক্কা মুকাররামাহ থেকে ফিরে আসার সময় উমামা পেছন থেকে ডাক দেন- আমাকে সাথে নিয়ে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম উমামাকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যান। মনে পড়ে হামযা (রা.)-এর কথা। রাসুলুল্লাহ (সা.) উমামাকে মদীনায় নিয়ে এসে জা'ফর ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর হাতে উমামাকে লালনপালন করার দায়িত্ব দেন। কারণ জা'ফর (রা.)-এর স্ত্রী ছিলেন উমামার খালা।

এছাড়া আমীর এবং উমারা নামেও হামযা (রা.)-এর ২ জন পুত্রের নাম পাওয়া যায়। তবে এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত কিছু খুঁজে পাইনি।

★ আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.)-এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুত্র-কন্যা ছিলেন এবং বনু হাশিমের মধ্যে আলী-ফাতিমা (রা.) দম্পতির বংশধরদের পর দ্বিতীয় বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন আব্বাস (রা.)-এর বংশধরগণ। আবু তালিবের মৃত্যুর পর আব্বাস (রা.) ছিলেন আহলে বায়েতের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে নিজের পিতার মতো ভালবাসতেন। সাহাবিরা তাঁকে বিশেষ সম্মান করতেন। খলিফারা তাঁকে দেখলে বাহন থেকে নেমে যেতেন। আব্বাস (রা.)-এর স্ত্রী লুবাবা বিনতে হারিস (রা.) ছিলেন ইসলাম গ্রহনকারী নারীদের মধ্যে দ্বিতীয়। এই সম্মানিত দম্পতির বিখ্যাত ৪ জন পুত্রের নাম নিম্নরূপ, যাদের কথা আমরা পুরো সীরাত জুড়ে পেয়ে থাকি।

১. ফযল ইবনে আব্বাস (রা.)। তিনি অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান মানুষ ছিলেন। কিছু মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বশীলতার গুণ থাকে। ফযল (রা.) ছিলেন এরকম একজন মানুষ। সদা জাগ্রত, বিশ্বস্ত এবং কর্মঠ।

২. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)। তাঁর সম্বন্ধে যত বলা হবে, ততো কম। তিন-চারটি পর্ব জুড়ে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর গুণাগুণ বর্ণনা করলেও দেখা যাবে যে, সবকিছু বাকি রয়ে গেছে। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদরের পাত্র, উম্মতের জ্ঞানের খনি, বুদ্ধিমান, বিবেচক, সুপরামর্শক, সৎসাহসী, সুদর্শন এবং উন্নত ধীশক্তিসম্পন্ন মেধাবি ব্যক্তিত্ব। এরকম একজন মানুষের দ্বারা আল্লাহ এ উম্মতকে সম্মানিত করেছেন।

৩. উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)। তিনি ছিলেন সফল এবং বিত্তশালী একজন ব্যবসায়ী। তাঁর দানশীলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি প্রতিদিন একটি উট কুরবানি দিয়ে গরিব ও মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। একদা বড়ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাঁকে বলেন, প্রতিদিন একটি করে উট কুরবানি দেয়ার প্রয়োজন নেই। উবায়দুল্লাহ (রা.) বড় ভাইয়ের কথার সম্মানার্থে দিনে একটি উট কুরবানি দেয়া পরিত্যাগ করেন। পরদিন থেকে তিনি দিনে দুটি করে উট কুরবানি দিতে শুরু করেন!

৪. কুছাম ইবনে আব্বাস (রা.)। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন। তাঁর চেহারায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারা মোবারকের ছাপ ছিল।

সাহাবিরা বলাবলি করতেন, যদি একই ঘরে সর্বপ্রকার গুণাগুণের সম্মিলন দেখতে চাও, তাহলে আব্বাস (রা.)-এর ঘরে দেখ। দায়িত্বশীলতায় ফযল, জ্ঞানে আব্দুল্লাহ, দানশীলতায় উবায়দুল্লাহ এবং সৌন্দর্যে কুছাম। এ ঘরকে যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তা'আলা স্বীয় রহমতের চাদরে ডেকে রেখেছিলেন। আল্লাহর নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর যে ৫ জন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি তাঁকে গোসল দিয়েছিলেন, তন্মধ্যে ৩ জন এই পরিবারের। গোসল দেয়ার মূল দায়িত্বটি পালন করেছিলেন আলী (রা.)। আব্বাস (রা.) এবং তাঁর দুই পুত্র ফযল ইবনে আব্বাস (রা.) ও কুছাম ইবনে আব্বাস (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দেহ মোবারক ধরে এদিক-ওদিক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এবং দেহ মোবারকের উপর পানি ঢেলে দিয়েছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুক্ত-দাস শুকরান (রা.)।

আব্বাস (রা.)-এর অন্যান্য জ্ঞাত পুত্র-কন্যাদের নাম নিম্নরূপ-

৫. মা'বাদ ইবনে আব্বাস

৬. আব্দুর রহমান ইবনে আব্বাস

৭. হারিস ইবনে আব্বাস

৮. আউন ইবনে আব্বাস

৯. মুশীর ইবনে আব্বাস

১০. কাছীর ইবনে আব্বাস

১১. তাম্মাম ইবনে আব্বাস

১২. ফারা বিনতে আব্বাস

১৩. উম্মে হাবীব বিনতে আব্বাস

১৪. আমিনা বিনতে আব্বাস

১৫. সাফিয়্যা বিনতে আব্বাস

আমরা প্রায় নিশ্চিত যে, এরা সবাই ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তবে এদের মধ্যে ক'জন সাহাবি ছিলেন, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছিনা। কয়েকজন অবশ্যই ছিলেন।

গত পর্ব এবং এ পর্বে এযাবৎ যাদের নাম উল্লেখ করেছি, তাঁরা সবাই বনু হাশিমের সদস্য এবং (যারা ইসলাম গ্রহন করেছেন তাঁরা) আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত। তাঁদের এবং তাঁদের বংশধরদের উপর যাকাত গ্রহন করা হারাম। কোন অবস্থাতেই তাঁরা যাকাত গ্রহন করতে পারবেন না।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ৪ জন ফুফাতো ভাইয়ের নাম আমরা নিশ্চিতভাবে জানি। বাকিদের পরিচয় বলতে পারছিনা।

★ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম ফুফু আরওয়াহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব (রা.)-এর ১ পুত্রের নাম পাওয়া যায়, যিনি প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন।

১. তুলাইব ইবনে উমায়ের (রা.)।

★ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম ফুফু সাফিয়্যা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব (রা.)-এর ৩ জন পুত্রের নাম পাওয়া যায়, যারা সবাই ইসলাম গ্রহন করেছিলেন।

১. যুবায়ের ইবনে আওয়াম (রা.)। তিনি বিখ্যাত সাহাবি এবং আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত।

২. সায়ীব ইবনে আওয়াম (রা.)

৩. আব্দুর রহমান ইবনে আওয়াম (রা.)


রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা ও ফুফুগণ

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মানিত দাদা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন মক্কার অবিসংবাদিত নেতা এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর পুরো জীবনে মোট ৬ বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আব্দুল মুত্তালিবের অন্যতম স্ত্রী ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্তর্ভুক্ত বনু মাখযুম গোত্রের সম্মানিত নারী ফাতিমা বিনতে আমর। তাঁর গর্ভেই জন্মগ্রহণ করেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব।

৬ স্ত্রীর গর্ভে আব্দুল মুত্তালিবের ১৮ জন সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করেন। ১২ জন পুত্র এবং ৬ জন কন্যা। তাঁদের বয়সের তারতিব আমাদের জানা নেই। তবে ইতিহাস তাঁদের নামসমূহ সংরক্ষণ করেছে। আব্দুল মুত্তালিবের ১২ জন পুত্রের নাম নিম্নরূপ-

১. হারিস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

২. কুছাম ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

৩. দ্বিরার ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

৪. মুস'আব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

৫. মুগিরা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

৬. যুবায়ের ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

৭. আবু তালিব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

৮. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

৯. হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

১০. মুকাউওয়াম ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

১১. আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

১২. আবু লাহাব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব

আব্দুল মুত্তালিবের ৬ জন কন্যার নাম নিম্নরূপ-

১. আতিকা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব

২. বাররাহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব

৩. উমাইমা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব

৪. আরওয়াহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব

৫. উম্মে হাকিম বিনতে আব্দুল মুত্তালিব

৬. সাফিয়্যা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব

[নামসমূহ বয়সের তারতিব অনুযায়ী নয়]

আব্দুল মুত্তালিবের পুত্রদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আপন চাচা, তথা আব্দুল্লাহ'র সহোদর ছিলেন দুজন। যথাক্রমে যুবায়ের এবং আবু তালিব। যুবায়ের ইবনে আব্দুল মুত্তালিব সেই ব্যক্তি, বিখ্যাত সমাজসেবী সংস্থা হিলফুল ফুদ্বুল গঠন করার ব্যাপারে যার প্রণিধানযোগ্য ভূমিকা ছিল। আবু তালিব সেই চাচা, যিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পিতৃস্নেহে লালনপালন করেছিলেন। বাকি চাচারা ছিলেন অন্যান্য দাদীর ঘরের। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশ বংশের অন্তর্ভুক্ত বনু যুহরা গোত্রের সম্মানিত নারী আমিনা বিনতে ওয়াহাবের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এই পবিত্র বন্ধনের ফলাফল হচ্ছেন আমাদের নবী সায়্যিদুনা মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সা.)। আল্লাহর নবী (সা.)-এর জন্মের ৬ মাস পূর্বেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ইয়াসরিবে (বর্তমান মদীনায়) মৃত্যুবরণ করেন।

আব্দুল মুত্তালিবের ১২ জন পুত্রের মধ্যে মাত্র ৪ জন ইসলাম পেয়েছিলেন। অর্থাৎ ইসলাম প্রচারের সময় পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তাঁরা যথাক্রমে আবু তালিব, আবু লাহাব, আব্বাস এবং হামযা। বাকিরা ইসলাম প্রচারের পূর্বেই মারা যান। জীবিত ৪ জনের মধ্যে দুজন, হামযা (রা.) এবং আব্বাস (রা.) ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। আবু তালিব এবং আবু লাহাব ইসলাম গ্রহন করেননি। আব্বাস (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রায় ৩ বছরে বড়। হামযা (রা.) ছিলেন মাত্র দেড় বছরে বড়। অর্থাৎ আব্বাস (রা.) এবং হামযা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সমবয়সী ছিলেন। সুতরাং আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতা আব্দুল্লাহ ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সন্তান, সেটি সঠিক নয়। আব্বাস (রা.) এবং হামযা (রা.) আব্দুল্লাহ থেকে বয়সে অনেক ছোট ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ৬ ফুফুর মধ্যে ৩ জন ইসলাম পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে সাফিয়্যা (রা.) এবং আরওয়াহ (রা.) ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। আরেক ফুফু আতিকা ইসলাম গ্রহন করেছিলেন কি না, এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। কারো মতে তিনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন, কারো মতে করেননি। বাকি ৩ ফুফু ইসলাম প্রচারের পূর্বেই মারা যান।