নেককারদের মৃত্যুকালীন অবস্থা
আল্লাহ তায়ালা এই জগতে যে সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করেছেন সে সব প্রাণীকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কেউ একদিন আগে আর কেউ একদিন পরে। কেউ বৃদ্ধ বয়সে আবার কেউ যুবক বয়সে। কেউ সুস্থ অবস্থায় আবার কেউ অসুস্থ অবস্থায়। যে যেখানেই যে অবস্থায় থাকেন না কেন মৃত্যু ঠিক সময় মত এসে হাজির হবে। এই মৃত্যু কারো জন্য সহজ আবার কারো জন্য কঠিন হবে। আল্লাহর নেককার বান্দা যারা তাদের মৃত্যু কিন্তু খুব সহজভাবে হবে। কেমন সহজ হবে কুরআন-হাদিসের আলোকে আমরা জানব ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা এই জগতে যে সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করেছেন সে সব প্রাণীকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কেউ একদিন আগে আর কেউ একদিন পরে। কেউ বৃদ্ধ বয়সে আবার কেউ যুবক বয়সে। কেউ সুস্থ অবস্থায় আবার কেউ অসুস্থ অবস্থায়। যে যেখানেই যে অবস্থায় থাকেন না কেন মৃত্যু ঠিক সময় মত এসে হাজির হবে। এই মৃত্যু কারো জন্য সহজ আবার কারো জন্য কঠিন হবে। আল্লাহর নেককার বান্দা যারা তাদের মৃত্যু কিন্তু খুব সহজভাবে হবে। কেমন সহজ হবে কুরআন-হাদিসের আলোকে আমরা জানব ইনশা আল্লাহ।
সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
জীবমাত্রই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। সে বিষয়টি সূরা আল-ইমরানের ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কারভাবে বলেছেন-
کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ - وَاِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ - فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ - وَمَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ.
জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদেরকে কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়।
এ আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে যে, প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর আখেরাতে নিজের কৃতকর্মের প্রতিদান ও শাস্তি প্রাপ্ত হবে, যা কঠিনও হবে আবার দীর্ঘও হবে। পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেই যে সফলতা চায় না। এ সফলতা একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণ করে। কেউ দুনিয়ার প্রচুর সম্পদ, নারী, গাড়ী-বাড়ী, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে নির্ধারণ করে। কেউ আবার সুস্বাস্থ্যকে নির্ধারণ করে। কেউ আবার অন্যকিছু। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষের সফলতা কিসে তা আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে বলে দিয়েছেন। তিনি বলছেন যে, যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে সেই সফলকাম।
সহিহ বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم - إِنَّ مَوْضِعَ سَوْطٍ فِي الْجَنَّةِ لَخَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ - فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ.
হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- একটি চাবুক রাখার সমপরিমাণ জান্নাতের জায়গা সমগ্র পৃথিবী ও তার মধ্যকার সব কিছুর চাইতে উত্তম। তোমরা চাইলে এ আয়াত পাঠ করতে পারো। তথা সূরা আল-ইমরানের ১৮৫ নম্বর আয়াত, যা উপরে বর্ণিত হয়েছে।
যেকোনো জায়গায় যেকোনো অবস্থায় মৃত্যু হবে।
জগতের যেখানেই যেকোনো অবস্থায় থাকলে মৃত্যুর সময় যখন হবে ঠিক সেই সময় মালাকুল মাউত এসে হাজির হবেন। সূরা নিসার ৭৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یُدۡرِکۡکُّمُ الۡمَوۡتُ وَلَوۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ.
তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।
উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে যে, তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা সুদৃঢ় প্রাসাদে হলেও মৃত্যু তোমাদেরকে বরণ করতেই হবে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, বসবাস করার জন্য কিংবা ধন-সম্পদের হেফাজতের উদ্দেশ্যে সুদৃঢ় ও উত্তম গৃহ নিৰ্মাণ করা তাওয়াক্কুল বা ভরসার পরিপন্থী কিংবা শরীয়াত বিরোধী নয়। (তাফসীরে কুরতুবী)
সহিহ বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ - أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِمَنْكِبِي - فَقَالَ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ - وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رضى الله عنهما يَقُولُ - إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ - وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ - وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ - وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন- তুমি দুনিয়াতে থাক যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী।
আর হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের আর অপেক্ষা করো না এবং সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার আর অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার সময় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য প্রস্তুতি লও। আর তোমার জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি লও।
সহিহ বুখারী শরীফের আরেক হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه قال - خَطَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم خُطُوطًا - فَقَالَ هَذَا الأَمَلُ وَهَذَا أَجَلُهُ - فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَهُ الْخَطُّ الأَقْرَبُ.
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আশা আর এটা তার আয়ু। মানুষ যখন এ অবস্থার মাঝে থাকে হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা (মৃত্যু) এসে যায়।
নেককাদের মৃত্যুকালীন অবস্থা কেমন হবে।
জীবনের শুভ ও পুণ্যময় সমাপ্তি প্রত্যেকেই প্রত্যাশা করে। আর একজন মুমিনের পরম প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা হলো ঈমান ও আমলের সঙ্গে মৃত্যু লাভ করা। মৃত্যুর আগেই যাবতীয় পাপ থেকে তাওবা করে নিজেকে শুধরে নেওয়া কোনো মুমিনের শেষ পরিণতির নিদর্শন। ভালো কাজ ও আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি ক্রমেই ধাবিত হওয়াও একটি নিদর্শন।
নেককাদের মৃত্যুর আগে ফেরেশতা সালাম দেন।
আল্লাহর একজন নেককার বান্দার মৃত্যুর সময় আসলে ফিরিশতাগণ তাদেরকে কিভাবে সাদর সম্ভাষণ জানান সে বিষয়টি সূরা আন-নহলের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰهُمُ الۡمَلٰٓئِکَةُ طَیِّبِیۡنَ - یَقُوۡلُوۡنَ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمُ ادۡخُلُوا الۡجَنَّةَ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ.
ফিরিশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় উত্তমভাবে। ফিরিশতাগণ বলবেন, তোমাদের উপর সালাম! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।
মুমিন মৃত্যুর আগে জান্নাতের সুসংবাদ পেতে থাকে।
সূরা ফুসসিলাতের ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
اِنَّ الَّذِیۡنَ قَالُوۡا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسۡتَقَامُوۡا تَتَنَزَّلُ عَلَیۡهِمُ الۡمَلٰٓئِکَةُ اَلَّا تَخَافُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَبۡشِرُوۡا بِالۡجَنَّةِ الَّتِیۡ کُنۡتُمۡ تُوۡعَدُوۡنَ.
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, তারপর তাতে অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট ফিরিশতা অবতীর্ণ হয়ে বলেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ নাও।
অর্থাৎ, এক আল্লাহ তাঁর কোন শরীক নেই। প্রতিপালকও তিনিই এবং উপাস্যও তিনিই। এ রকম নয় যে, তাঁর প্রতিপালকত্বকে কেবল স্বীকার করবে এবং উপাস্যত্বের ব্যাপারে অন্যকেও শরীক করবে।
অর্থাৎ, কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থাতেও ঈমান ও তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং তা থেকে আদৌ বিমুখ হয় না। কেউ কেউ এখানে এই 'ইস্তিক্বামাত'এর অর্থ করেছেন, ইখলাস। অর্থাৎ, বিশুদ্ধচিত্তে কেবল এক আল্লাহরই ইবাদত ও আনুগত্য করে। যেমন, হাদীসেও এসেছে যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলল, আমাকে এমন কথা বলে দিন যে, আপনার পর যেন আমার অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন না হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, (قُلْ آمَنْتُ بِاللهِ ثُمَّ اسْتَقِمْ) "তুমি বল, আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম। অতঃপর তারই উপর অবিচল থাক। (সহিহ মুসলিম শরীফ)
কেউ কেউ বলেছেন, ফিরিশতাগণ এই সুসংবাদ তিন সময়ে দেন, মৃত্যুর সময়, কবরে এবং কবর থেকে পুনরায় উঠানোর সময়।
নেককাদের মৃত্যু হবে সন্তুষ্ট অবস্থায়।
সূরা ফজরের ২৭-৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
یٰۤاَیَّتُہَا النَّفۡسُ الۡمُطۡمَئِنَّۃُ - ارۡجِعِیۡۤ اِلٰی رَبِّکِ رَاضِیَۃً مَّرۡضِیَّۃً - فَادۡخُلِیۡ فِیۡ عِبٰدِیۡ - وَادۡخُلِیۡ جَنَّتِیۡ.
হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে আস সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
ইবনে মাজাহ এর হাদিসে এসেছে-
عن أبى هريرة رضي الله عنه قال - قال رسول الله صلى الله عليه وسلم - الْمَيِّتُ تَحْضُرُهُ الْمَلاَئِكَةُ فَاِذَا كَانَ الرَّجُلُ صَالِحًا قَالُوا - اُخْرُجِيْ َيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الطَّيِّبِ اُخْرُجِي حَمِيدَةً وَاَبْشِرِيْ بِرَوْحٍ وَّرَيْحَانٍ وَّرَبٍّ غَيْرِ غَضْبَانَ فَلاَ يَزَالُ يُقَالُ لَهَا ذَلِكَ حَتَّى تَخْرُجَ ثُمَّ يُعْرَجُ بِهَا اِلَى السَّمَاءِ فَيُفْتَحُ لَهَا فَيُقَالُ - مَنْ هَذَا فَيَقُولُونَ فُلاَنٌ - فَيُقَالُ مَرْحَبًا بِالنَّفْسِ الطَّيِّبَةِ - كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الطَّيِّبِ اُدْخُلِيْ حَمِيدَةً وَّابْشِرِيْ بِرَوْحٍ وَّرَيْحَانٍ وَرَبٍّ غَيْرِ غَضْبَانَ .- فَلاَ يَزَالُ يُقَالُ لَهَا ذَلِكَ حَتَّى يُنْتَهَى بِهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي فِيهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ.
হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- মৃত্যুর সময় মানুষের নিকট ফেরেশতা আগমন করেন। অতএব মুমূর্ষু ব্যক্তি উত্তম লোক হলে তারা বলেন, হে পবিত্র আত্মা! পবিত্র দেহ থেকে প্রশংসিত অবস্থায় বের হয়ে এসো এবং আল্লাহর রহমত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকে। অতঃপর রূহ বের হয়ে আসলে তারা তা নিয়ে আসমানে আরোহণ করেন। এ রূহের জন্যে আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, সে কে? ফেরেশতাগণ বলেন, অমুক ব্যক্তি। তখন বলা হয়, পবিত্র আত্মাকে স্বাগতম, যা ছিল পবিত্র দেহে। প্রশংসিত অবস্থায় তুমি প্রবেশ করো। আল্লাহর রহমাত ও সুঘ্রানের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। তাকে অবিরতভাবে এ সংবাদ প্রদান করা হয় যাবত না তা মহামহিম আল্লাহ যে আসমানে অবস্থান করেন সেখানে পৌঁছে যায়।
এখানে মুমিনদের রূহকে ‘আন-নাফসুল মুতমায়িন্নাহ’ বা প্রশান্ত আত্মা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ এ আত্মা আল্লাহ্র প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ্ তা‘আলাও তার প্রতি সন্তুষ্ট। কেননা, বান্দার সন্তুষ্টির দ্বারাই বোঝা যায় যে, আল্লাহ্ তার প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ্ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট না হলে বান্দা আল্লাহ্র ফয়সালায় সন্তুষ্ট হওয়ার তাওফীকই পায় না। এমনি আত্মা মৃত্যুকালে মৃত্যুতেও সন্তুষ্ট ও আনন্দিত হয়।
এখন প্রশ্ন হলো, একথা তাকে কখন বলা হবে? বলা হয় মৃত্যুকালে বলা হবে, অথবা, যখন কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত হয়ে হাশরের ময়দানের দিকে যেতে থাকবে সে সময়ও বলা হবে এবং আল্লাহ্র আদালতে পেশ করার সময়ও তাকে একথা বলা হবে। প্রতিটি পর্যায়ে তাকে এই মর্মে নিশ্চয়তা দান করা হবে যে, সে আল্লাহ্র রহমতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। (তাফসীরে ইবনে কাছীর)
প্রশান্ত আত্মাকে সম্বোধন করে বলা হবে, আমার বিশেষ বান্দাদের কাতারভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্ৰবেশ কর। এ আদেশ হতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, জান্নাতে প্ৰবেশ করা নেককার সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল। তাদের সাথেই জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে। এ কারণেই হতরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম দোয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন-
وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ.
এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্ম পরায়ণ বান্দাদের শামিল করুন। (সূরা আন-নামল ১৯)
অনুরূপভাবে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামও দোয়া করতে গিয়ে বলেছিলেন-
وَّاَلْحِقْنِىْ بِالصَّالِحِينَ.
আর আমাকে সৎকর্ম পরায়ণদের সাথে মিলিয়ে দিন। (সূরা ইউসুফ ১০১)
এমনকি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামও দোয়া করে বলেছিলেন-
رَبِّ هَبْ لِىْ حُكْمًا وَّاَلْحِيْنِىْ بِالصّٰلِحِيْنَ.
হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের সাথে মিলিয়ে দিন। (সূরা আশ-শুয়ারা ৮৩)
উপরে বর্ণিত নবীগনের দোয়াতে বোঝা গেল, সৎ কর্মশীলদের সঙ্গ লাভ করা একটি মহা নেয়ামত, যা নবী-রাসূলগণও উপেক্ষা করতে পারেননি।
ভালো মৃত্যুর আলামত।
কুরআন-হাদিসের আলোকে মানুষের ভালো মৃত্যুর অনেক আলামত পাওয়া যায়। আমরা খুব সংক্ষেপে কয়েকটি জানব।
কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে মৃত্যুবরণ করা।
সুনানে আবু দাউদ শরীফের হাদিসে এসেছে-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যারা সর্বশেষ বাক্য হবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
মৃত্যুর পর কপাল থেকে ঘাম বের হওয়া।
সহীহ ইবনু মাজাহ শরীফের হাদিসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم - الْمُؤْمِنُ يَمُوتُ بِعَرَقِ الْجَبِينِ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদা (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- কপালের ঘামসহ মুমিনের মৃত্যু হয়।
পবিত্র জুমার রাত বা দিনে মৃত্যুবরণ করা।
সুনানে তিরমিজী শরীফের হাদিসে এসেছে-
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم - مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ إِلاَّ وَقَاهُ اللَّهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- জুমার দিনে অথবা জুমার রাতে কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে কবরের শাস্তি হতে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন।
কোনো নেক কাজ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
উমরা বা হজের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
সর্বোপরি যে কোন ভালো কাজ তথা নামাজের অবস্থায়, রোজা রাখার অবস্থায় বা কুরআন শরীফ তেলাওয়াত অবস্থাসহ ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত হওয়া ইত্যাদি ভালো মৃত্যুর নিদর্শন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ঈমানের সহিত যেন মৃত্যু দান করেন। (আমিন)