ইসলামের কন্ঠইসলামের কন্ঠ
সম্পাদকীয়আর্কাইভআমাদের পরিচিতিযোগাযোগের মাধ্যম
হাদীস শরীফ

যদি একটিবার সামনে দাঁড়াতে পারতাম

যদি একটিবার সামনে দাঁড়াতে পারতাম সায়্যিদা আমিনার ঘরে ধাত্রীর কাজ করছিলেন শিফা বিনত আসওয়াদ। তিনিই সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেহারা দেখেছেন। পরবর্তী ৬৩ বছরে ওই মুবারক চেহারা দেখেছেন আরও লক্ষাধিক মানুষ। আমাদের সে সৌভাগ্য হয়নি। আমরা না দেখেই ভালোবেসে যাই।

হাফিজ মাওলানা মারজান আহমদ চৌধুরী
যদি একটিবার সামনে দাঁড়াতে পারতাম

সায়্যিদা আমিনার ঘরে ধাত্রীর কাজ করছিলেন শিফা বিনত আসওয়াদ। তিনিই সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেহারা দেখেছেন। পরবর্তী ৬৩ বছরে ওই মুবারক চেহারা দেখেছেন আরও লক্ষাধিক মানুষ। আমাদের সে সৌভাগ্য হয়নি। আমরা না দেখেই ভালোবেসে যাই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-

مِنْ أَشَدِّ أُمَّتِي لِي حُبًّا نَاسٌ يَكُونُونَ بَعْدِي يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ رَآنِي بِأَهْلِهِ وَمَالِهِ

“আমার সবচেয়ে মায়ার উম্মাত তারা, যারা আমার পরে আসবে। তারা তাদের পরিবার ও সহায়-সম্পত্তির বিনিময়ে একটিবার আমাকে দেখতে চাইবে।” [সহীহ মুসলিম, ২৮৩২]

তবুও ভাবি, যদি একটিবার তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারতাম! দেখতাম, আমাদের নবী ﷺ অতিশয় লম্বা নন, আবার খাটোও নন। মধ্যম বা মধ্যমের চেয়ে একটু উঁচু গড়নের। মুখমণ্ডল খুব লম্বা নয়, আবার একদম গোলও নয়। সামগ্রিকভাবে প্রশস্ত, কিছুটা গোলাকার। কপাল অনেক বড়। কপালের মধ্যে একটি সুক্ষ্ম রক্তনালী। কোনো কারণে রাগান্বিত হলে রক্তনালীটি উজ্জ্বল রক্তিম হয়ে ভেসে উঠে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দেখতাম, তাঁর গায়ের রঙ শ্যামলা নয়, আবার একদম সাদা পাংশুবর্ণও নয়। বরং উজ্জ্বল শুভ্রকায়, লাবণ্যে ভরপুর। চেহারাটি মরুর আকাশে উদিত পূর্ণিমা চাঁদের ন্যায় ঝলমল করে। তবে এই আভিজাত্য পার্থিব আরাম-আয়েশের আভিজাত্য নয়, বরং আল্লাহর কুদরতের সুন্দরতম নিদর্শন। যে একবার চোখ মেলে তাকায়, সে আর চোখ ফেরাতে পারে না। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দেখতাম, তাঁর মাথার চুল একদম সটান নয়, আবার খুব বেশি কোঁকড়ানোও নয়। বলা যায়, অনেকটা ঢেউ খেলানো। চুলগুলো কানের নিচ থেকে ঘাড়ের ওপর পর্যন্ত ঝুলানো। দাড়ি অতিশয় ঘন এবং প্রশস্ত। নামাজে তিলাওয়াত করার সময় দাড়ির নড়াচড়া পেছন থেকে বুঝা যায়। কানের পাশ দিয়ে নেমে আসা চুল ও থুতনির দাড়িতে সর্বমোট ১৪ থেকে ২০টি কেশ সাদা। বাকি চুল ও দাড়ি গাঢ় কালো রঙের। যখন তেল বা মেহেদি ব্যবহার করেন, তখন ওই সাদা কেশরাশি আর চোখে পড়ে না। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দেখতাম, তাঁর চোখজোড়া প্রশস্ত, পূর্ণবর্ধিত– টানাটানা। ভেতরের সাদা অংশ ধবধবে সাদা, কালো অংশ নিখুঁত কালো। চোখের ভুরু কেশে ভরপুর, অনেকটা বাঁকানো। দুই ভুরুর মাঝখানে সামান্য ফাঁক। ওই ফাঁকে নূরের দীপ্তি খেলে যায়। চোখের পাপড়ি অনেক লম্বা। পৃথিবীতে আসার সময়ই তিনি চোখের মধ্যে কুহুল মাখানো অবস্থায় এসেছিলেন। তাঁর চোখের পাপড়ি সব সময় অশ্রুভেজা থাকে। এতে চোখের মোহিনীশক্তি এত প্রবল হয় যে, কেউ সরাসরি চোখের দিকে তাকানোর সাহস পায় না। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দেখতাম, তাঁর দাঁতগুলো শিলাবৃষ্টির ন্যায় চকচকে, পরিপাটি। একটির সাথে আরেকটি লাগানো, বাঁকানো কিংবা ওপর-নিচে বিশৃঙ্খল নয়। প্রতিটি দাঁত আলাদা আলাদাভাবে স্থাপিত এবং একটির সাথে অপরটির পার্থক্য বুঝা যায়। ওপর ও নিচের পাটিতে একদম সামনের দুটি দাঁতের মধ্যখানে সামান্য ফাঁক। কথা বলার সময় ওই ফাঁক দিয়ে নূর বিচ্ছুরিত হয়। মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি শব্দ ঝরঝরে, সুমিষ্ট। দুই ঠোটের মধ্যখানে একটি প্রশান্তিদায়ক মুচকি হাসি সব সময় লেগে থাকে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দেখতাম, তাঁর নাকটি উন্নত, মধ্যম গড়নের। নিচের দিক খানিকটা বাঁকানো। তবে একদম চোখা নয়। গালদুটি ভরাট ও মসৃণ। নাক ও গালে চিত্তাকর্ষক নূরানি আভা। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দেখতাম, তাঁর গলাটি সৌষ্ঠবপূর্ণ। অতিরিক্ত মেদ না থাকায় গলার লম্বাটে ভাব স্পষ্ট বুঝা যায়। কাঁধের দুই পাশ তুলনামূলকভাবে অনেক প্রশস্ত। এর মধ্যখানে কবুতরের ডিম্বাকৃতির একটি লালটে মাংসপিণ্ড– মুহরে নুবুওয়াত। ওই মুহরে নুবুওয়াতের সামনে আসমান, যমিন ও উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু নিতান্ত মূল্যহীন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দেখতাম, তাঁর বুক ও পেট সমান্তরাল। পেট কখনও বুকের চেয়ে আগে বাড়েনি। বুক থেকে পশমের একটি পাতলা রেখা নিচের দিকে নেমে নাভি পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়েছে। বাকি দেহ লোমহীন। দেহ এতটা মসৃণ যে, ওযুর পানি সহজে গড়িয়ে পড়ে। শরীরের নিচের অংশ সুসামঞ্জস্যপূর্ণ, মজবুত। বাহন থেকে নামার সময় লাফিয়ে নামলেও তিনি ভারসাম্য হারান না। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দেখতাম, তাঁর হাত-পা সোজা, সুঠাম– একদম নিখুঁত। জোড়াগুলো বড় বড়। হাত ও পায়ের উপরিভাগ মাংসল, পেশিগুলো মজবুত। হাতের আঙুল বলিষ্ঠ, লম্বা। দেখলেই ছুঁয়ে দেখতে মন চায়। কথা বলার সময় তিনি হাত নাড়েন। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ডান হাতের ভেতর মৃদু আঘাত করেন। হাটার সময় সামনের দিকে খানিকটা ঝুঁকে দ্রুতগতিতে হাটেন। দেখে মনে হয় ঢালু জায়গা দিয়ে নামছেন। কাউকে ইঙ্গিত করার সময় পুরো হাত ব্যবহার করেন, কেবল আঙুল নয়। কারও দিকে আড়চোখে তাকান না। তাকানোর সময় পুরো শরীর ঘুরিয়ে পরিপূর্ণভাবে তাকান। যার দিকে তাকান, সে তাকিয়েই থাকে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আমার এই নাপাক চোখ দিয়ে কভু ওই নূরানি চেহারা দেখতে পারব, এমনটি ভাবাও চরম বেয়াদবি। তবে কিয়ামাতের দিন দেখব, সেটি ভেবে শান্তি পাই। ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার মা-বাবা, আমার নিঃশ্বাস, আমার রূহ আপনার জন্য কুরবান হোক।

[মূল বর্ণনা শামাইলে তিরমিযী থেকে গৃহীত। কিছু তথ্য দালাইলুল নুবুওয়াহ ও খাসাইসুল কুবরা থেকে প্রাপ্ত। কল্পনা ও শব্দপ্রয়োগ আমার নিজস্ব]