হায়াতুন্নবী ﷺ
হযরত মুহাম্মদ ﷺ কবর শরীফে জীবিত, এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদাহ। এমন কি সকল নবী-রাসুল ও শহীদগন কবরে জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষথেকে রিজিক প্রাপ্ত। ইমাম ইবনুল হাজ্জ ও ইমাম কুসতালানী (রাহঃ) বলেন: ﻭَﻗَﺪْ ﻗَﺎﻝَ ﻋُﻠَﻤَﺎﺀُ ﻧَﺎﻟَﺎ ﻓَﺮْﻕَ ﺑَﻴْﻦَ ﻣَﻮْﺗِﻪ ﻭَﺣَﻴﻮ ﺗِﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻓِﻰْ ﻣُﺸَﺎﻫِﺪَ ﺗِﻪ ﻟِﺎُﻣَّﺘِﻪِ ﻭَﻣَﻌﺮِ ﻓَﺘِﻪ ﺑِﺎَﺣْﻮَ ﺍﻟِﻬِﻢْ ﻭَﻧِﻴَّﺎ ﺗِﻬِﻢْ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻤِﻬِﻢْ ﻭَﺧَﻮَﺍﻃِﺮِ ﻫِﻢْ ﻭَﺫﻟِﻚَ ﺟَﻠِﻰٌّ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻟَﺎﺧَﻔَﺎﺀَﺑِﻪ অনুবাদঃ আমাদের সু-বিখ্যাত উলামায়ে কিরামগণ বলেন যে, হুযুর ﷺ এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিঁনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট। কোনরূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই এখানে। (ইমাম ইবনুল হাজ্জ (রাহঃ) ﻣﺪﺧﻞ গ্রন্থ, ইমাম কুসতালানী (রাহঃ) ﻣﻮﺍﻫﺐ (মাওয়াহিব) গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছেদ)
হযরত মুহাম্মদ ﷺ কবর শরীফে জীবিত, এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদাহ। এমন কি সকল নবী-রাসুল ও শহীদগন কবরে জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষথেকে রিজিক প্রাপ্ত। ইমাম ইবনুল হাজ্জ ও ইমাম কুসতালানী (রাহঃ) বলেন:
ﻭَﻗَﺪْ ﻗَﺎﻝَ ﻋُﻠَﻤَﺎﺀُ ﻧَﺎﻟَﺎ ﻓَﺮْﻕَ ﺑَﻴْﻦَ ﻣَﻮْﺗِﻪ ﻭَﺣَﻴﻮ ﺗِﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻓِﻰْ ﻣُﺸَﺎﻫِﺪَ ﺗِﻪ ﻟِﺎُﻣَّﺘِﻪِ ﻭَﻣَﻌﺮِ ﻓَﺘِﻪ ﺑِﺎَﺣْﻮَ ﺍﻟِﻬِﻢْ ﻭَﻧِﻴَّﺎ ﺗِﻬِﻢْ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻤِﻬِﻢْ ﻭَﺧَﻮَﺍﻃِﺮِ ﻫِﻢْ ﻭَﺫﻟِﻚَ ﺟَﻠِﻰٌّ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻟَﺎﺧَﻔَﺎﺀَﺑِﻪ
অনুবাদঃ আমাদের সু-বিখ্যাত উলামায়ে কিরামগণ বলেন যে, হুযুর ﷺ এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিঁনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট। কোনরূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই এখানে। (ইমাম ইবনুল হাজ্জ (রাহঃ) ﻣﺪﺧﻞ গ্রন্থ, ইমাম কুসতালানী (রাহঃ) ﻣﻮﺍﻫﺐ (মাওয়াহিব) গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছেদ)
আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ ﷺ যে, কবর শরীফে জীবিত, এ ব্যাপারে অসংখ্য দালিলিক প্রমান বিদ্যমান। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হল-
প্রমান-১ঃ
পবিত্র ক্বোরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ইরশাদ করেন-
ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺇِﺫْ ﻇَﻠَﻤُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﺟَﺎﺀُﻭﻙَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻐْﻔَﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺳْﺘَﻐْﻔَﺮَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻟَﻮَﺟَﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻮَّﺍﺑًﺎ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ
অনুবাদঃ ‘‘আর তারা যখন নিজের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার নিকট আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসুল ﷺ যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন, অবশ্য্ই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী মেহেরবান রূপে পেত।’’ (সূরাঃ নিসা, আয়াত- ৬৪)
ইমাম সুবকী (রহ.) তাঁর ‘শিফাউস সিকাম’ গ্রন্থে এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘যদিও আয়াতটি রাসূল ﷺ এর জীবদ্দশার সাথে সম্পর্কিত তদুপরি ওফাতের সাথে সাথে তাঁর এ মর্যাদার পরিসমাপ্তি ঘটেনি। এ কারণে বলা যায় সকলের জন্যই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার এ পদ্ধতির সার্বজনীনতা রয়েছে, তাই আলেমগণ উপরিউক্ত আয়াত হতে সার্বজনীনতা বুঝে থাকেন এবং রাসূলের কবরের নিকট উক্ত আয়াত পাঠ করা মুস্তাহাব। (সিফাউস সিকাম, পৃ. ৮১-৮২)
এই আয়াতের প্রেক্ষিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদাহ হল আজও যদি কেহ রওজা পাকে গিয়ে রাসুল ﷺ এর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। অধিকাংশ মুফাস্সিরিন এ মত ব্যক্ত করেছেন, যেহেতু তাদের আকীদা হল রাসুল ﷺ হায়াতুন্নবী।
প্রমান-২:
রাসুল ﷺ বলেছেন- ‘অবশ্য্ই আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীদের শরীর ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন।’ এতে বুঝা যায় নবীগণের শরীর অক্ষত আছে, কারন জমিনের সে ক্ষমতা না্ই যে তাঁদের শরীর ভক্ষণ করবে। যত নবী রাসূল আছেন তারা কেউই মৃত নন, সবাই আপন রওজাতে স্বশরীরে জীবিত এবং রিযিক পেয়ে থাকেন এবং নামাজ পড়েন। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে…
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟْﺠَﻬْﻢِ ﺍﻟْﺄَﺯْﺭَﻕُ ﺑْﻦُ ﻋَﻠِﻲٍّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﺑُﻜَﻴْﺮٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻠِﻢُ ﺑْﻦُ ﺳَﻌِﻴﺪٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺠَّﺎﺝِ، ﻋَﻦْ ﺛَﺎﺑِﺖٍ ﺍﻟْﺒُﻨَﺎﻧِﻲِّ ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻓِﻲ ﻗُﺒُﻮﺭِﻫِﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ [ ﺣﻜﻢ ﺣﺴﻴﻦ ﺳﻠﻴﻢ ﺃﺳﺪ ] : ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ
অনুবাদঃ হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন- “নবীগণ তাদের কবরে জীবিত। তারা সেখানে নামায পড়েন। (মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫) মুহাদ্দিসীনদের ঐক্যমতে এ হাদীসটি সহীহ।
ইমাম শাওকানী এবং আলবানীর রায়ঃ ১) আল্লামা শাওকানী বলেন, এ হাদীস সাবিত তথা প্রমাণিত। (নাইলুল আওতার-৩/৩০৫)
২) নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীসটি সহীহ। (সহীহুল জামে, বর্ণনা নং-২৭৯০) তিনি আরো বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। (আত-তাওয়াসসুল, বর্ণনা নং-৫৯)
প্রমান-৩:
আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী (রহ.) বর্ণনা করেন- হযরত মুসা (আঃ) যখন ফেরাউনের রাজ্য থেকে তার অনুসারীদের নিয়ে আল্লাহর হুকুমে হিজরত করার প্রস্তুতি নেন তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ‘হে মুসা (আঃ) তুমি হযরত ইউসুফ (আঃ) এর কবর থেকে তাঁর লাশ উঠিয়ে সাথে করে নিয়ে যাও।’ উল্লেখ্য যে, প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর ইন্তেকাল হয়েছে। এতে বুঝা যায় ৭০০ বছর পরও নবীর শরীর অক্ষত আছে, তা নাহলে আল্লাহ তায়ালা এ নির্দেশ দিতেন না। এজন্য মুসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর লাশ মুবারক উঠিয়ে সাথে করে নিয়ে গেছেন এবং কেনানে পুনঃরায় দাফন করেছেন।
প্রমান-৪:
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ইন্তেকালর পূর্বে তিনি ওসিয়ত করেন যে, ‘আমার মৃত্যূর পর গোসল ও নামাজ শেষে আমার লাশ রাসুল ﷺ এর রওজাপাকের পাশে নিয়ে যাবে এবং আমার পক্ষ থেকে রাসুল ﷺ কে সালাম জানাবে, আর বলবে যদি রাসুল ﷺ অনুমতি দেন তাহলে আমার ইচ্ছা যে তাঁর পাশে যেন আমার কবর হয়।’ আবু বকর (রাঃ) এর ইন্তেকালর পরে হযরত আলী (রাঃ) তাঁর ওসিয়ত অনুযায়ী কাজ করলে রাসুল ﷺ এর রওজা শরীফ থেকে সালামের জওয়াব আসে এবং এ আওয়াজ ও আসে যে- ‘তোমরা বন্ধুর সাথে বন্ধুকে মিলিয়ে দাও।’ এতে বুঝা যায় রাসুল ﷺ হায়াতুন্নবী হওয়ার কারণেই কবর থেকে জওয়াব দিয়েছেন।
প্রমান-৫ঃ
হযরত আওস বিন আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত- হুজুর ﷺ বলেন, তোমাদের দিবস সমুহের মধ্যে উত্তম হল জুমার দিন। এই দিনে আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেন, এই দিনে তাঁর ভেতরে রুহ ফুকে দেওয়া হয়, এই দিনে তাঁর জান কবজ করা হয়, এই দিনে সিংগায় ফুক দেওয়া হবে। তাই তোমরা এই দিনে বেশী বেশী করে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে, কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়। সাহাবাগন নিবেদন করেন হুজুর! (আপনার ইন্তেকালের পর) কিভাবে আমাদের সালাত ও সালাম আপনার কাছে পৌছিবে? অথচ আপনি তো মাটির সাথে একাকার হয়ে যাবেন। হুজুর সা: বললেন- ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺮﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﺃﻥ ﺗﺄﻛﻞ ﺃﺟﺴﺎﺩ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ অর্থাৎ- আল্লাহ পাক অবশ্যই নবীগনের দেহ ভক্ষন করা কে জমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ ৪/৮- হাঃ ১৬২, ২৭৫৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা- ২/২৫৩- হাঃ ৮৬৯৭- আবুদাউদ-১/২৭৫- হাঃ ১০৪৭- নাসাঈ-৩/৯১- হাঃ ১৩৭৪- ইবনে মাজাহ-১/৫২৪- হাঃ ১৬৩৬- দারেমী- ১/৪৪৫- হাঃ ১৫৭২- ইবনে খুযায়মা- এই হাদিস ৪২ টি কিতাবে পাওয়া যায়)
প্রমান-৬ঃ
হযরত ফাতিমা (রাঃ) যে দিন ইন্তেকাল করেন ঐ দিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে রাসুল ﷺ তাহাকে বলতেছেন- ‘ও ফাতেমা, তুমি চলে আস আমার সাথে ইফতার করবে।’ এর মর্মার্থ হল ইফতারের পূর্বেই তাঁর মৃত্যূ হয়ে যাবে। হযরত আলী (রাঃ) ঘরে আসার পর ফাতিমা (রাঃ) উক্ত স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করলে হযরত আলী (রাঃ) এর আর বুঝতে বাকী রহিলনা যে আজ ফাতিমা (রাঃ) এর জীবনের শেষ দিন। তাই তারা উভয়ে ক্রন্দন করতেছেন, এমন সময় হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) ঘরে ঢুকলেন এবং মা-বাবাকে ক্রন্দনরত দেখে তারাও কান্না শুরু করে দিলেন। ইহা দেখে ফাতিমা (রাঃ) অন্যান্য দিনের মত বললেন, হে হাসান ও হুসাইন (রাঃ)! তোমরা তোমাদের নানা মুহাম্মদ ﷺ এর খেদমতে চলে যাও। তারা দু্ই ভাই মায়ের কথামত রাসুল ﷺ এর খেদমতে রওজা শরীফের কিনারে হাজির হলেন। তখন রওজা শরীফ থেকে আওয়াজ আসল- “হে হাসান ও হুসাইন (রাঃ) তোমরা তেমাদের মায়ের কাছে চলে যাও, কেননা আজকের পরে আর তাকে আর পাবেনা, কিন্তু আমার কাছে পরেও আসতে পারবে।” তখন তারা দৌড়ে ঘরে চলে গেলেন। এখানে প্রমাণিত হল রাসুল ﷺ রওজা শরীফে জীবিত এবং বাহিরের খবর সম্পর্কে অবগত থাকেন এবং সেখান থেকে প্রয়োজন মত জবাবও দিতে পারেন।
প্রমান-৭ঃ
রাসুল ﷺ বলেছেন- তোমরা জুমআর দিনে আমার উপর বেশী বেশী দুরুদ পাঠ করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীদের শরীর ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন। এজন্য আমার ওফাতের পরও আমি অক্ষত ও জীবিত থাকব, সুতরাং তোমরা অবিরত দুরুদ পড়বে এবং তা আমার কাছে পৌছানো হবে। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ( ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ . ﻓﺈﻧﻪ ﻣﺸﻬﻮﺩ ﺗﺸﻬﺪﻩ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ . ﻭﺇﻥ ﺃﺣﺪﺍ ﻟﻦ ﻳﺼﻠﻲ ﻋﻠﻲ ﺇﻻ ﻋﺮﺿﺖ ﻋﻠﻲ ﺻﻼﺗﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﺮﻍ ﻣﻨﻬﺎ ) ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﻭﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺕ ؟ ﻗﺎﻝ ( ﻭﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺕ . ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺮﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﺃﻥ ﺗﺄﻛﻞ ﺃﺟﺴﺎﺩ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺠﻨﺎﺋﺰ، ﺑﺎﺏ ﺫﻛﺮ ﻭﻓﺎﺗﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 1637- )
অনুবাদঃ হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন- তোমরা জুমআর দিন বেশি বেশি করে দুরুদ পড়। নিশ্চয় ফেরেস্তারা এর উপর স্বাক্ষী থাকে। আর যখন কেউ আঁমার উপর দরুদ পড়ে তখনই তা আঁমার নিকট পেশ করা হয়। আবু দারদা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম- আপনার ইন্তিকালের পরেও কি তা পেশ করা হবে? উত্তরে তিঁনি বললেন- হ্যাঁ! কেননা আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীদের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ হা-১৬৩৬,১৬৩৭, সুনানুস সাগীর লিল বায়হাকী হা-৪৬৯, আল মুজামুল আওসাত হা-৪৭৮০, সুনানে দারেমী হা-১৫৭২, মুসনাদুল বাজ্জার হা-৩৪৮৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হা-৫৭৫৯)
প্রমান-৮ঃ
অপর এক হাদিসে বর্ণিত আছে- কেউ দুরুদ শরীফ পাঠ করলে তার পরিচয় সহ রাসুল ﷺ এর নিকট উপস্থাপন করা হয়, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে রাসুল ﷺ সরাসরি শুণতে পারেন।
আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে- প্রতি সোমবার রাসুল ﷺ এর নিকট উম্মতে মুহাম্মদীর আমলনামা উপস্থাপন করা হয়, আর রাসুল ﷺ তা দেখে বদকার উম্মতের জন্য প্রার্থনা করেন আর নেককার উম্মতের উপর খুশি হন। এরকম কিয়ামত পর্যন্ত রাসুল ﷺ এর নিকট আমলনামা উপস্থাপন করা হবে যেহেতু তিনি হায়াতুন্নবী ﷺ ।
প্রমান-৯:
বর্ণিত আছে একদিন বাদশাহ মারওয়ান দেখল- এক ব্যাক্তি রাসুল ﷺ এর কবর শরীফের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ক্রন্দন রত, তখন সে না চিনে বলে উঠল- কে তুমি ? এখানে মাটি ও পাথরের নিকট কান্না করতেছ। এ কথা শুণে তিঁনি যখন মাথা তুলে মারওয়ানের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলেন যে- আমি এখানে অন্য কিছুর নিকট আসিনি, আমি এসেছি সাইয়্যিদুনা রাসুল ﷺ এর নিকট। তাকে দেখে ও তার কথা শুণে বাদশাহ ভয় পেয়ে চলে গেল, কারণ তিনি ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ)। সাহাবায়ে কেরামের এরকম করার কারণ হল সাহাবীদের বিশ্বাস ছিল রাসুল ﷺ সবকিছু সমান ভাবে অবগত আছেন যেভাব ওফাতের পূর্বে ছিলেন।
প্রমান-১০:
রাসুল ﷺ বলেন, আমি মেরাজ রজণীতে হযরত মুসা (আঃ) কে কবরে দাঁড়িয়ে নামাজরত অবস্থায় দেখেছি। মুসলিম শরীফে আছে—
ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ” ﺃَﺗَﻴْﺖُ – ﻭَﻓِﻲ ﺭِﻭَﺍﻳَﺔِ ﻫَﺪَّﺍﺏٍ : ﻣَﺮَﺭْﺕُ – ﻋَﻠَﻰ ﻣُﻮﺳَﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺃُﺳْﺮِﻱَ ﺑِﻲ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻜَﺜِﻴﺐِ ﺍﻟْﺄَﺣْﻤَﺮِ، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺋِﻢٌ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻲ ﻗَﺒْﺮِﻩِ “
অনুবাদঃ হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, আমি মেরাজের রাতে কাসীবে আহমার স্থান অতিক্রমকালে দেখতে পাই হযরত মুসা (আঃ) তাঁর কবরে দাড়িয়ে নামায পড়ছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩৭৫)
প্রমান-১১:
মেরাজ রজণীতে রাসুল ﷺ বায়তুল মুকাদ্দাসে সকল নবী-রাসুলগণের নামাজের ইমামতি করেছিলেন, সবা্ই তাঁকে এক্তেদা করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। তাই আমাদের বিশ্বাস নবীগণ কবর শরীফে শুধু জীবিতই নয়, বরং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করতে পারেন। যেহেতু বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে বায়তুল মুকাদ্দাসে স্বশরীরে সমবেত হওয়ার প্রমান পাওয়া গেল।
প্রমান-১২:
রাসুল ﷺ এর ওফাতের পর তাহার কবর শরীফের পার্শ্বে হযরত আবু বকর (রাঃ) কে দাফন করা হয়, তখন পর্যন্ত হযরত আয়শা (রাঃ) এর ঘর কবর শরীফের পাশে ছিল। যেহেতু তার ঘরে রাসুল ﷺ কে দাফন করা হয়। তখন পর্যন্ত তার ঘর ও কবর শরীফের মধ্যখানে কোন পর্দা ছিল না। আর যখন হযরত উমর (রাঃ) কে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর পাশে দাফন করা হল তখন হযরত আয়শা (রাঃ) তার ঘর ও কবর শরীফের মধ্যখানে পর্দার ব্যবস্থা করেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে হযরত আয়শা (রাঃ) এর বিশ্বাস ছিল সাহাবীগনও কবর শরীফে জীবিত এবং সেখান থেকে দেখতে পারেন, এজন্য তিনি পর্দার ব্যবস্থা করেন।
প্রমান-১৩:
আমিরুল মুমিনীন হজরত উমর (রাদিঃ) এর খেলাফত আমলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি বেলাল ইবনে হারেস আল মুযানীকে হুজুরের রাওদ্বা পাকে প্রেরন করেছিলেন। তিনি এসে নিবেদন করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার উম্মতের জন্য রহমতের বৃষ্টি বর্ষনের পার্থনা করুন। তারা ধবংসের ধার প্রান্তে চলে যাচেছ। রাওদ্বা পাক থেকে আওয়াজ আসল, হে বেলাল! তুমি আমার পক্ষ থেকে উমর কে সালাম জানাবে এবং বলবে যে, অচিরেই তাঁরা সিক্ত হবে। (দালায়েলুন নবুয়্যত)
প্রমান-১৪:
অপর হাদিসে এসেছে- হাররা নামক স্থানে ইয়াযিদের বাহিনী কর্তৃক মুসলমান গন আক্রমনের স্বীকার হন। সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব (রাদিঃ) অসুস্থ থাকায় তিনি যুদ্ধে যেতে না পারায় হুজুর (সাঃ) এর রাওদ্বা পাকের কীনারে অবস্থান করেন। তিন দিন যাবত মসজিদে নববীতে আজান, এক্বামত ও জামাত হয়নি। তিনি বলেন, এই তিন দিন আমি রাওদ্বা পাক থেকে আজান এক্বামতের আওয়াজ শুনেই নামাজ আদায় করেছি। (মেশকাত-২/৫৪৫- বাবুল কেরামত অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের ৫ নং হাদিস)
প্রমান-১৫:
খলিফা আবু জাফর মনসুর ও ইমাম মালেক (রাহঃ) হজ্ব মউসুমে হুজুর ﷺ এর রাওদ্বা পাকের কিনারে উভয়ের সাক্ষাত হলে ইমাম মালেক খলিফাকে বললেন, আমিরুল মুমিনীন! আপনি এই স্থানে নীচু আওয়াজে কথা বলবেন। কেননা আল্লাহ পাক কিছু সম্প্রদায়কে আদাব শিখিয়েছেন এভাবে- লা তারফাউ আস্বওয়াতাকুম ফাওক্বা স্বাওতিন নাবিয়্যি,, আবার কিছু সম্প্রদায়ের প্রসংশা করেছেন এভাবে- ইন্নাল্লাযীনা ইয়াগুদ্ধ্বোনা আস্বওয়াতাহুম ইনদা রাসুলিল্লাহ,,, আবার কিছু সম্প্রদায়ের নিন্দাও করেছেন এভাবে- ইন্নাল্লাযীনা ইউনাদোনাকা মিন ওয়ারায়িল হুজুরাতি,, এরপর খলিফা বললেন, হুজুর! আমি কি ক্বিবলাহর দিকে ফিরে দুয়া করবো না কবর মুখী হয়ে? ইমাম মালেক বললেন, কেন আপনি তাঁর (হুজুরের) থেকে মুখ ফিরাবেন? অথচ তিনি তো হলেন কিয়ামত পর্যন্ত আপনার ও আপনার পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর উসিলা। অতএব, আপনি তাঁর রাওদ্বা মুখী হয়ে তাঁর শাফায়াত কামনা করুন। তা কবুল হবে। কেননা তাঁরই শানে বলা হয়েছে- ওয়ালাও আন্নাহুম ইয যালামো আনফুসাহুম জাঊকা ফাসতাগফারুল্লাহা ওয়াসতাগফারা লাহুমুর রাসুলু লাওয়াজাদুল্লাহা তাউয়াবার রাহীমা,,, (কাজী আয়াজ্ব তাঁর,, শিফা,,২/৪১, ইবনে মুলক্বিন তাঁর, গায়াতুস সাওল, ২৭৫ পৃং)
প্রমান-১৬:
কাজি আবু তাইয়্যিব শাফেঈ ও শাফেঈ মতাবলম্বীরা সাইয়্যিদ উতাবী (রাদি:) এর ঘঠনা উল্লেখ করতঃ বলেন, সাইয়্যিদ উতাবী বলেন, একবার আমি হুজুর (সাঃ) এর কবরের পাশে তন্দ্রাচ্ছন্নবস্থায় ছিলাম, ইত্য বসরে এক গ্রাম্য লোক এসে হুজুর কে নিবেদন করল, হুজুর! আমি আল্লাহকে বলতে শুনেছি, তিনি আপনার শানে বলেছেন- ওয়ালাও আন্নাহুম ইয যালামো থেকে শেষ পর্যন্ত। আমি আপনার শাফায়াত প্রার্থী। আমার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করুন, তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। এই বলে লোকটি চলে যাচেছ। হুজুর (সাঃ) এর সাথে আমার স্বপ্ন যোগে মুলাক্বাত হল। তিনি বলছেন উতাবী! তুমি ঐ লোকটিকে এই শুভ সংবাদ দাও যে, আল্লাহ পাক আমার উসিলায় তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (আল মাজমু-৮/২৭৪, কেফায়াতুন নিয়্যাহ-৭/৫৩৭, আসনাল মাত্বালীব-১/৫০৩, ফাতহুল ওয়াহহাব-১/১৭৬, মুগনিউল মুহতাজ-২/২৮৪, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া-১৮/৭৪, তাবাক্বাতুল হানাবালা-৪/৫১৫)
প্রমান-১৭:
হযরত বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রাহঃ) সহ প্রায় ৯০হাজার দর্শক প্রত্যক্ষ করেছেন যে, হযরত রেফায়ী (রাহঃ) রওজা পাকের সামনে কাসীদাহ পাঠকরা অবস্থায় রাসুল ﷺকবর শরীফ হতে নুরানী হাত মোবারক বের করে তার সাথে মুসাফাহ করেন।
প্রমান-১৮:
‘‘দালায়লুল খায়রাত’’ নামক প্রসিদ্ধ কিতাব যা পৃথিবী জুড়ে আশেকে রাসুল ﷺ গন যুগ যুগ ধরে ওযীফা হিসেবে পাঠ করতেছেন, উক্ত কিতাবের সংকলক মরোক্কর সুস শহরের অধিবাসী শাযিলিয়া তরীকার শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন সুলা্মিান যাজুলি (রাহঃ) ২৫শে জুন ১৪৬৫ ইংরেজী মোতাবেক ৮৭০ হিজরীর জিলক্বদ মসে ইন্তেকাল করেন, ঐ দিনেই জোহরের নামাজের পরে মসজিদের পাশ্ তাকে দাফন করা হয়। দাফন করার ৭৭ বছর পর মরোক্কর বাদশাহ সুস শহর থেকে তাঁর লাশ মুবারক স্থানান্তর করে মারাকিশ শহরের রিয়াদুল আরিশ নামক গোরস্থানে সমাহিত করেন। দাফনের পূর্বে হাজার হাজার জনতার সামনে তাঁর চেহারা মোবারক থেকে কাফন সরানো হয়। প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে- তখন মনে হচ্ছিল তার মাথার চুল ও দাঁড়ি আজই যেন আচড়ানো হয়েছে। সম্পূর্ণ অক্ষত তাঁর লাশ মোবারক দেখে মনে হচ্ছিল তিনি মৃত নন জীবিত এবং খুব আরামের সাথে ঘুমাচ্ছেন।
অতএব যেখানে একজন ওলীর লাশ অক্ষত পাওয়া গেল, সেখানে সাাইয়্যিদুল মুরছালিন নবী করিম ﷺ মৃত বা মরে মাটির সাথে মিশে গেছেন (নাউজুবিল্লাহ) এরূপ ধারনা করা তো কুফরীর সামিল।
প্রমান-১৯:
শাওয়াহেদুন নাবুওয্যত গ্রন্থে হযরত আব্দুর রহমান জামী (রাহঃ) উল্লেখ করেন- হযরত সালেম নাবহানী (রাহঃ) (একজন বিশিষ্ট তাবেয়ী) বসরার বাসিন্দা ছিলেন এবং ৪০বছর হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) এর সংসর্গে অতিবাহিত করেন। তিনি সর্বদা রোজা রাখতেন এবং প্রতিরাতে ক্বোরআন শরীফ খতম করতেন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত মানুষ তাঁহার কবর হতে সেহরীর সময় ক্বোরআন শরীফ তেলাওয়াত শুনতে থাকে। একদিন হযরত সালেম নাবহানী (রাহঃ) হযরত হামীদ তাবীল (রাহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি এ তথ্য পেয়েছ যে নবী-রাসুলগণ ছাড়াও কোন ব্যক্তি স্বীয় কবরে নামাজ আদায় করে? তিনি বললেনঃ না, আমি পাইনি। হযরত সালেম (রাহঃ) বললেনঃ যদি আল্লাহ তায়ালা এরূপ অনুমতি দেন, তবে (আমি) সালেমকে অবশ্যই অনুমতি দেয়া হবে।
জনৈক নির্ভরযোগ্য রাবী বর্ণনা করেনঃ আল্লাহর কসম, যখন আমি সালেম (রাহঃ) কে কবরে নামালাম, তখন হযরত হামীদ তাবীলও আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা কবরের উপর ইট ঠিকঠাক করছিলাম, এমন সময় একটি ইট নিচে পড়ে গেল। আমি মাথা নিচু করে তাকাতেই দেখি, তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি হামিদকে ইশারা করলাম যে, কিছু দেখতে পাচ্ছ? সে বললঃ চুপ থাক। দাফন কার্য সমাপ্ত করে আমরা উভয়েই সালেমের গৃহে গেলাম এবং তাঁর কন্যাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ সালেম (রাহঃ) কি আমল করতেন? কন্যা বললঃ আপনারা কি দেখেছেন? আমরা কবরের ঘটনা বর্ণনা করলে সে বললঃ তিনি ৫০বছর যাবত সমগ্র রাত্রি আল্লাহর এবাদতে দন্ডায়মান থাকতেন। সেহরীর সময় হলে এ দোয়া পাঠ করতেনঃ হে আল্লাহ, যদি তুমি তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে কবরে নামায পড়ার অনুমতি দাও, তবে আমাকে দিও। আল্লাহ তায়ালা তাঁর এ দোয়া কবুল করেছেন।
অতএব এখান থেকে প্রমাণিত হল যে, তাবেয়ীগণের আক্বীদা ছিল নবী-রাসুলগণ স্বীয় কবরে নামাজ আদায় করেন, তাই এ বিশ্বাস নিয়ে দোয়ার বরকতে তাবেয়ীও নামায পড়ার অনুমতি প্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরা্ং সাাইয়্যিদুল মুরছালিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলা্হি ওয়া সাল্লাম এর অবস্থা কি হতে পারে, একজন মুমিন হিসেবে অনুমান করে নিতে পারেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী উলামাগনের অভিমতঃ
ইমাম ইবনুল হাজ্জ ও ইমাম কুসতালানী (রাহঃ) বলেন:
ﻭَﻗَﺪْ ﻗَﺎﻝَ ﻋُﻠَﻤَﺎﺀُ ﻧَﺎﻟَﺎ ﻓَﺮْﻕَ ﺑَﻴْﻦَ ﻣَﻮْﺗِﻪ ﻭَﺣَﻴﻮ ﺗِﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻓِﻰْ ﻣُﺸَﺎﻫِﺪَ ﺗِﻪ ﻟِﺎُﻣَّﺘِﻪِ ﻭَﻣَﻌﺮِ ﻓَﺘِﻪ ﺑِﺎَﺣْﻮَ ﺍﻟِﻬِﻢْ ﻭَﻧِﻴَّﺎ ﺗِﻬِﻢْ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻤِﻬِﻢْ ﻭَﺧَﻮَﺍﻃِﺮِ ﻫِﻢْ ﻭَﺫﻟِﻚَ ﺟَﻠِﻰٌّ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻟَﺎﺧَﻔَﺎﺀَﺑِﻪ
অনুবাদঃ আমাদের সু-বিখ্যাত উলামায়ে কিরামগণ বলেন যে, হুযুর ﷺ এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিঁনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট। কোনরূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই এখানে। (ইমাম ইবনুল হাজ্জ (রাহঃ) ﻣﺪﺧﻞ গ্রন্থ, ইমাম কুসতালানী (রাহঃ) ﻣﻮﺍﻫﺐ (মাওয়াহিব) গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছেদ)
আল্লামা তকীউদ্দীন ইবনে তাইমিয়ার মত- তিনি তার 'ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকীম' গ্রন্থে লিখেছেন, প্রত্যেক মুসলমান স্বীয় কবরে অবস্থান করে তার যিয়ারতকারীদেরকে চিনেন। (জাওয়াহিরুল বিহার, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৩০)
আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী রহ. বলেন-হযরত জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (রাহ.) তার কিতাবে লিখেন- “নবী, শহীদ, ওলী এবং যাদের অন্তরে ক্বোরআন শরীফ আছে তাদের শরীরও মাটি নষ্ট করতে পারেনা।”
ইবনে হাজার আসক্বালানী- `তালখীস’ কিতাবে লিখেন, নবীগনের ইন্তেকালের পরপরই তাঁদের রুহ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ইমাম বায়হাকি- `হায়াতুল আম্বিয়া’ তে বলেন, নবীগন তাঁদের ইন্তেকালের ৪০ দিন পর অন্যান্য মানুষের মত জীবিত হয়ে যান। আল্লাহর ইচ্ছায় পৃথিবীর সর্বত্রে তারা পরিভ্রমন করে থাকেন।
ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী- মেরক্বাত ৩/২৩৮ এ বলেন, নিশ্চয়ই নবীগন কবরে জীবিত। যারা তাঁদের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করেন, তিনি তা শ্রবন করতে পারেন। মেরক্বাত ৩য় খন্ডে আছে, নবীগন একই সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পরিভ্রমন করতে পারেন।
কাজি আয়াজ বলেন- নবীগন কবরে জীবিত থেকে নামাজ পড়েন। বায়হাকিতে আনাস রাদিঃ হতে একখানা হাদিস এসেছে- নবীগন কবরে জীবিত, তাঁরা নামাজ পড়েন।
রাসূল ﷺ মৃত বা মরে মাটির সাথে মিশে গেছেন এই উদ্ভট কথা শুধু জেহালত পুর্নই নয় বরং ঈমান বিধ্বংসী কথাও বটে। কোনও ঈমানদার মাত্রই একথা বলতে পারেনা।
যেখানে শহীদ, ওলী এবং হাফেজে ক্বোরআন গণ কবরে জীবিত সেখানে নবীকুল সম্রাট, হুযুর পাক ﷺ মৃত বা মরে মাটির সাথে মিশে গেছেন এরূপ ধারনা করা তো কুফরীর সামিল। যে এরূপ ধারনা করবে তার ঈমান চলে যাবে, তার স্ত্রীর সাথে তার বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে, এরূপ অবস্থায় সে যদি ঈমান আনয়ন না করে, স্ত্রীর সাথে সংসার করে যেনা করার কারনে তার যত সন্তান সন্ততি হবে সকলে জারজ বলে গন্য হবে।
আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন- যারা আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তো তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিঁনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি। (সূরা আহযাব, আয়াত- ৩৩ ও ৫৭)
ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ.)- ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহঃ) এর অন্যতম ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ.) কিতাবুল খেরাজের মধ্যে বলেন, যে কোন মুসলমান ব্যক্তি হুযুর ﷺ কে মন্দ বলে কিংবা মিথ্যাবাদী বলে কিংবা দোষী বলে, বা অসম্মানসূচক কথা বলে নিশ্চয়ই সে কাফির হবে এবং তার স্ত্রীর তালাক হয়ে যাবে। (কিতাবুল খেরাজ)
ফতোয়ায়ে কাজ্বীখানে আছে- যদি কেউ কোন বিষয়ে রাসূলে পাক ﷺ এর দোষ বর্ণনা বা সমালোচনা করে বা তাঁকে কলংকযুক্ত করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।
একই কিতাবে ইমাম আবু হাফস কবীর থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ﷺ এর কেশরাজি হতেও কোন একটিকে কলংকময় করলে কাফির হবে।
আবু দাউদ শরীফে এসেছে- নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেছেন,
ما من أحد يسلّم عليّ إلّا ردّ اللّه عليّ روحي حتّى أردّ عليه السّلام
'যে কেউ আমার প্রতি সালাম পেশ করলে আল্লাহ তা'য়ালা আমার রূহ মুবারক ফিরিয়ে দেন তখন আমি তার সালামের জওয়াব দিয়ে থাকি।'
কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যাকরে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জওয়াব-
প্রত্যেক মানুষ মরণশীল। আল্লাহ বলেন – “কুল্লু নাফসিন যাইক্বাতুল মাউত” – প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর সর্বশেষ নবী হওয়ার সাথে সাথে তিনিও একজন মানুষ ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন এবং তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন। আল্লাহ বলেন - “ইন্নাকা মায়্যিতুন ওয়া ইন্নাহুম-মায়্যিতুন” – (হে নবী) আপনিও মৃত্যু বরণ করবেন আর তারাও মৃত্যু বরণ করবেন। (সুরা আল-যুমার, আয়াত ৩০)
এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও একদিন মৃত্যুবরণ করবেন।
এ আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে কিছু ফেতনাবাজ একথা প্রমান করতে চান যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হায়াতুন্নবী নয় তিনি কবর শরীফে জীবিত নয়। মূলত তাদের এই আকীদা-বিশ্বাস কোরআন হাদিস তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা বিরোধী। কেননা অসংখ্য দালিলিক প্রমাণ বিদ্যমান যে নবী, শহীদ এমনকি অলি আল্লাহ গণও কবরে জীবিত। উক্ত আয়াত দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় না যে ইন্তেকালের পরে কবরে জীবিত থাকা সম্ভব নয় বা জীবিত থাকতে পারবেনা। আল্লাহ পাক ঘোষণা দিয়েছেন, ওয়ালা তাকুলু লিমান ইউকতালু ফিসাবিলিল্লাহ আমওয়াতা ----। অর্থাৎ যারা আল্লাহর রাস্তায় মারা যায় তাদেরকে তোমরা মৃত বলিও না ---।
সুতরাং যারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে ইন্তেকালের পর কবরে শরিফে জীবিত মনে করাকে সঠিক আকীদা বিরোধী মনে করে প্রকৃত পক্ষে তারাই কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যাকরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে ও মনগড়া আকীদা তৈরী করছে ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরে সাহাবীরা আশ্চর্য হয়ে পড়েন একজন নবী কি করে মারা যেতে পারেন? উমার (রাঃ) খোলা তলোয়ার নিয়ে ঘোষণা করেন, যেই ব্যক্তি বলবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তার ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবো।
তখন এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি, আবু বকর (রাঃ) এই ভুল ধারণা দূর করে দেন সমস্ত সাহাবীদের অন্তর থেকে এই বলে, “যেই ব্যক্তি মুহাম্মাদের পূজা করতো সে জানুক মুহাম্মাদ মারা গেছেন। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর উপাসনা করে সে জানুক আল্লাহ চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। কারো মনে এই ধারণা জন্ম হোকনা য, রাসূল সাঃ মৃত্যুবরণ করবেন না বা তার মৃত্যু হবেনা।
উক্ত ঘটনা এবং হযরত আবু বকর এবং হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্ত কারীরা এটা প্রমাণ করতে চায় যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহির ওয়াসাল্লাম এর শরীর ইন্তেকালের পর অন্যান্য সাধারণ মানুষের মত মাটির সাথে মিশে গেছে। বস্তুত সাহাবাগণ সর্বসাধারণকে এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যু হওয়া অসম্ভব কিছু নয়, একমাত্র আল্লাহ্ তয়ালাই চিরঞ্জীব।
মানুষের জীবন দুই প্রকার, একটা মৃত্যুর আগে আরেকটা পরে যাকে পরকাল বলে। আর কবর থেকে নিয়ে কিয়ামতে হাশর হওয়া পর্যন্ত জীবনকে “বরযখের জীবন” বা পর্দার জীবন বলা হয়। মানুষ মারা গেলে তার দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যায় আর বরযখের জীবন শুরু হয় যা দুনিয়ার জীবন থেকে আলাদা। আর ঐ কবরের জীবন কেমন, কি রকম এটা বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সে সম্পর্কে কুরআন হাদীসে আমাদের যতটুকু জানানো হয়েছে আমরা ততটুকু কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই ইমান আনবো। কিন্তু কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা অতিরিক্ত প্রশ্ন করবোনা। এটাই হলো ইমান বিল গায়েব –অদৃশ্যে বিশ্বাস। আল্লাহ্ বলেছেন শহীদগণ কবরে জীবিত এবং তাদেরকে খাবার প্রদান করা হয়। এখানে কি খাবার দেওয়া হয় ? কিভাবে দেওয়া হয়? তাহারা কিভাবে আহার করেন? নবীগণ নামাজ পড়েন কিভাবে? ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। আমাদের কর্তব্য হলো বিশ্বাস স্থাপন করা, অবান্তর প্রশ্ন উত্থাপন করা নয়। আল্লাহ্ পাক যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা করতে পারেন, তিনি সর্বশক্তিমান। তাছাড়া আমরা তো বিশ্বাস করি কবরে সওয়াল জওয়াব করা হয়, এটা জীবিত করে নয় কি?
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে আমাদের দুরুদগুলো ফেরশতারা পোঁছে দেন, আমাদের দুনিয়ার জীবনের কিছু কথা আমাদের মৃত আত্মীয় স্বজনদের কাছে বলা হয়, পরিচিত মৃত ব্যাক্তিদের আত্মাদের মাঝে দেখা সাক্ষাত হয়, অনেক মৃত ব্যাক্তিকে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়, - এইসবগুলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। আমরা এইগুলো বিশ্বাস করবো কিন্তু ব্যাখ্যা করা বা দুনিয়ার জীবনের সাথে তুলনা করার চেষ্টা করবো না।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর রাসূলের শেখানো আদর্শ পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন, আমীন ।