ইসলামের কন্ঠইসলামের কন্ঠ
সম্পাদকীয়আর্কাইভআমাদের পরিচিতিলেখা পাঠানোর নিয়মাবলীযোগাযোগের মাধ্যম
হাদীস শরীফ

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) : একটি দালীলিক পর্যালোচনা

ঈদ,মিলাদ,নবী তিনটি শব্দ যোগে দিবসটির নামকরণ হয়েছে। ঈদ অর্থ- আনন্দ, মিলাদ অর্থ- জন্ম আর নবী অর্থ নবী বা সংবাদদাতা বা বার্তাবাহক। তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবীর অর্থ দাঁড়ায় নবীর জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মীলাদের পারিভাষিক অর্থ, আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহ. তাঁর বিখ্যাত কিতাব "আল মাওরিদুর রাবী"তে বলেন - المولد الشريف يشمل علي ذكر مولده الشريف والاجماع لسماع معجزاته وسيراته والصلاة والسلام عليه و سماع المدائح التي تقال في حقه و الدعاء للميت و الحي و إطعام الطعام و ادخال السرور علي قلوب الأمة -

মাওলানা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তানজিম
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) : একটি দালীলিক পর্যালোচনা

(১) ঈদ মিলাদুন্নাবী (ﷺ) এর তাৎপর্য :-

ঈদ,মিলাদ,নবী তিনটি শব্দ যোগে দিবসটির নামকরণ হয়েছে। ঈদ অর্থ- আনন্দ, মিলাদ অর্থ- জন্ম আর নবী অর্থ নবী বা সংবাদদাতা বা বার্তাবাহক।

তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবীর অর্থ দাঁড়ায় নবীর জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মীলাদের পারিভাষিক অর্থ, আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহ. তাঁর বিখ্যাত কিতাব "আল মাওরিদুর রাবী"তে বলেন -

المولد الشريف يشمل علي ذكر مولده الشريف والاجماع لسماع معجزاته وسيراته والصلاة والسلام عليه و سماع المدائح التي تقال في حقه و الدعاء للميت و الحي و إطعام الطعام و ادخال السرور علي قلوب الأمة -

অর্থাৎ মীলাদ নবীর জন্মবৃত্তান্ত, তাঁর মুজিজা সমূহ ও সীরাতের আলোচনার জন্য একত্রিত হওয়া। আর যথাযথ প্রশংসাসহ তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা। জীবিত ও মৃতের জন্য দোয়া করা, অতঃপর তাবাররুকের আয়োজন করা এবং মানুষের অন্তরে নবীর আগমন আনন্দিত হওয়া। যা প্রতিবছর ১২ রবিউল আউওয়ালে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ।


এই দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে প্রসিদ্ধ তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন-


ﻗﺎﻝ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﺒﺼﺮﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻋﻨﻪ ﻭﺩﺩﺕ ﻟﻮ ﮐﺎﻥﻟﯽ ﻣﺜﻞ ﺟﺒﻞ ﺍﺣﺪ ﺫﮬﺒﺎ ﻓﺎﻧﻔﻘﺘﻪ ﻋﻠﯽ ﻗﺮﺍﺀﺓ ﻣﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﯿﻪ ﻭﺳﻠﻢ •

অর্থাৎ- যদি আমার কাছে উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে আমি তা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিন উপলক্ষে মাহফিলে খরচ করতাম।

[সূত্রঃ আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১]


(২) মিলাদুন্নবী(ﷺ)পালনের বৈধতা :-


∆ ১ নং দলিল:-


আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন-

وَ اِذۡ اَخَذَ اللّٰہُ مِیۡثَاقَ النَّبِیّٖنَ لَمَاۤ اٰتَیۡتُکُمۡ مِّنۡ کِتٰبٍ وَّ حِکۡمَۃٍ ثُمَّ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَکُمۡ لَتُؤۡمِنُنَّ بِہٖ وَ لَتَنۡصُرُنَّہٗ ؕ قَالَ ءَاَقۡرَرۡتُمۡ وَ اَخَذۡتُمۡ عَلٰی ذٰلِکُمۡ اِصۡرِیۡ ؕ قَالُوۡۤا اَقۡرَرۡنَا ؕ قَالَ فَاشۡہَدُوۡا وَ اَنَا مَعَکُمۡ مِّنَ الشّٰہِدِیۡنَ • فَمَنۡ تَوَلّٰی بَعۡدَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ •

“হে প্রিয় রাসূল! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের ঘটনা, যখন আমি আম্বিয়ায়ে কেরামগণের নিকট থেকে এইভাবে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব এবং হিকমত অর্থাৎ নবুয়ত দান করবো, অতঃপর তোমাদের কাছে এক মহান রাসূলের শুভাগমন হবে- যিনি তোমাদের প্রত্যেকের নবুয়তের সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা সকলে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনায়ন করবে এবং সর্বোত্তমভাবে তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। তোমরা কি এ কথার অঙ্গীকার করছো এবং অঙ্গীকারে কি অটল থাকবে? সমস্ত নবীগণ বললেন- হাঁ, আমরা অঙ্গীকার করলাম। আল্লাহ তায়ালা বললেন- তোমরা পরস্পর স্বাক্ষী থেকো এবং আমি ও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী রইলাম।

সুতরাং এরপর যারা ফিরে যাবে, তারা তো ফাসিক।

(সূরা আল-ইমরান ৮১-৮২ নং আয়াত)।


এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো-

(১) অন্যান্য নবীগণ (আঃ) থেকে আল্লাহ তায়ালা অঙ্গীকার আদায় করেছিলেন।

(২) সমস্ত নবীগণ সেদিন মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।

(৩)মূলত ঐ মাহফিলটি নবীজী(ﷺ)র আগমনী বা মিলাদ এর মাহফিল ছিল। (নবীগণ পৃথিবীতে আসার পূর্বেই আলামে আরওয়াহতে এই মাহফিল হয়েছিল)

(৩)নবীজীর আগমন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নবীগণকে উপস্থিত রেখে আলোচনা করেছেন।


∆ ২ নং দলিল:-


পবিত্র হাদীছ শরীফ এর মধ্যে এসেছে,

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ، رضى الله عنه أَنَّرَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ ‏ “‏ فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ ‏”‏ ‏.


আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ঐদিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং ঐদিন আমার উপর (কুরআন) নাযিল হয়েছে।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৪০)


নবী (ﷺ) নিজের জন্মদিনে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ার্থে রোজা রাখতেন ।


এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা গেল নবীজির জন্মদিন পালন করা নিঃসন্দেহে জায়েজ । কারণ তিনি নিজেই পালন করেছেন ।


∆ ৩ নং দলিল :-


বিশ্বনবী (ﷺ) সারা বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ, আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সব থেকে বড় উপহার বা এহসান । আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন কারীমের মধ্যে বলেন,


لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ


আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ (এহসান) করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে (মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে) নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা পূর্বে ছিল পথভ্রষ্ট। (সূরা আল ইমরান ১৬৪)


আল্লাহতালা পৃথিবীতে নবী (ﷺ) কে পাঠিয়েছেন এটা আল্লাহর বড় উপহার বা এহসান বা অনুগ্রহ ।

আর আল্লাহর এই বড় অনুগ্রহ মানুষ লাভ করেছে ১২ রবিউল আওয়ালে । তাই যারা আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা তারা এই দিনে খুশি হয়ে থাকেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে থাকেন এবং নবী (ﷺ) র আগমনের খুশি প্রকাশ করেন ।


∆ ৪ নং দলিল :-


মীলাদুন্নবীর শিরোনাম হাদীস শরীফে এসেছে :-

√ আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা আত্ তিরমিজী রহ (২৭৯ হি:) তাঁর বিখ্যাত কিতাব জামে আত্ তিরমিজীর ২য় খন্ডের ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম লিখেন

"باب ما جاء في ميلاد النبي صلى الله عليه وسلم"

অর্থাৎ,যা রাসূল (সা.) এর জন্ম সম্পর্কে এসেছে।


√ ইমাম বায়হাকি রহ.(মৃত্যু - ৪৫৮ হি.) তাঁর বিখ্যাত সিরাত সংক্রান্ত হাদীসের কিতাব "دلائل النبوةِ" নামক কিতাবের ১ম খন্ডের ৪৯ নং পৃষ্ঠায় "أبواب في ميلاد رسول الله" শীর্ষক একটি অধ্যায় এনেছেন।যেখানে তিনি রাসূল সা. এর জীবনবৃত্তান্ত আলোচনা করেছেন।


∆ ৫ নং দলিল :-


নবীজির মীলাদের আলোচনা সকল নবীগন করেছেন:-

عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ السُّلَمِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنِّي عَبْدُ اللهِ فِي أُمِّ الْكِتَابِ لَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ وَسَأُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيلِ ذَلِكَ دَعْوَةِ أَبِي إِبْرَاهِيمَ وَبِشَارَةِ عِيسَى قَوْمَهُ وَرُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورُ الشَّامِ •

হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ সুলামী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আল্লাহর নিকট তাঁর লওহে মাহফূযে লিখিত তখনও সর্বশেষ নবী, যখন আদম কাদা অবস্থায় পড়ে ছিলেন। আর এর তাৎপর্য এই যে, (আমার নবুঅতের প্রথম বিকাশ ঘটে) আমার পিতা ইব্রাহীমের দু‘আ, ঈসার তাঁর কওমকে দেওয়া সুসংবাদ এবং আমার আম্মার দেখা সেই স্বপ্নের মাধ্যমে, যাতে তিনি তাঁর নিকট থেকে এমন জ্যোতি বের হতে দেখেন যা, শামদেশের অট্টালিকা সমূহকে আলোকিত করেছিল।

(আহমাদ ১৭১৫০, হাকেম ৩৫৬৬, ত্বাবারানী ৬২৯, সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৪০৪)


∆ ৬ নং দলিল:-


হযরত হাস্সান ইবনে সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মিম্বরে দাঁড়িয়ে কবিতার মাধ্যমে মীলাদুন্নবী (ﷺ) পাঠ করেছেন। দীর্ঘ কবিতার একাংশ নিন্মরূপ-


وَاَجْمَلَ مِنْکَ لَمْ تَرَقَطُّ عَیْنِیْ وَاَکْمَلَ مِنْکَ لَمْ تَلِدِ النِّسَآءُ

قَدْ وُلِدْتَ مُبَرَّأً مِّنْ کُلِّ عَیْبٍ قَدْ کَاَنَّکَ خُلِقْتَ کَمَا تَشَآءُ

وَضَمَّ الْاِلٰہُ اِسْمَ النَّبِیِّ بِاِسْمِہٖ اِذَا قَالَ فِی الْخَمْسِ الْمُؤَذِّنُ اَشْہَدُ

অনুবাদ :-

ক. ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনার চেয়ে সুন্দর আমার চোখ আর কাউকে দেখেনি। আপনার চেয়ে পরিপূর্ণ কোন সন্তান মহিলারা জন্ম দেয়নি।


খ. আপনি সব দোষত্রুটি হতে মুক্ত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন। আপনার এ সূরত যেন আপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই সৃষ্টি করা হয়েছে।


গ. আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে সংযুক্ত করেছেন। (এর প্রমাণ হলো) যখন মুআয্যিন পাঞ্জেগানা নামাযের জন্য ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ বলে আযান দেয়। [দিওয়ান-ই হাস্সান]


মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর আলোচনা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট দিনে সীমিত নয় বরং যেকোনো দিনে করা যাবে । যেহেতু ১২ রবিউল আওয়ালে বিশ্বনবী (ﷺ) জন্মগ্রহণ করেছেন তাই সেই দিনে মানুষ তুলনামূলক বেশি মিলাদুন্নবী করে থাকে ।


√ ৭ নং দলিল:-

হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস-

عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُمَا کَانَ یُحَدِّثُ ذَاتَ یَوْمٍ فِیْ بَیْتِہٖ وَقَاءِعَ وِلاَدَتِہٖ بِقَوْمٍ فَیَبْشِرُوْنَ وَیَحْمَدُوْنَ اِذْ جَآءَ النَّبِیُّ ﷺ وَقَالَ حَلَّتْ لَکُمْ شَفَاعَتِیْ •

(اَلتَّنْوِیْرُ فِیْ مَوْلِدِ الْبَشِیْرِ النَّذِیْرِ لِاِبْنِ دَحْیَۃَ)


অর্থাৎ ‘‘একদিন তিনি (হযরত ইবনে আব্বাস) কিছু লোক নিয়ে নিজ ঘরে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম-বৃত্তান্ত আলোচনা করে আনন্দ উৎসব করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনাসহ দুরূদ শরীফ পাঠ ও সালাম পেশ করছিলেন। এমন সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে এটা দেখে বললেন, ‘‘তোমাদের সকলের জন্য আমার শাফা‘আত অবধারিত হয়ে গেলো।’’

[ইবনে দাহ্ইয়া কৃত আত্-তানভীর ফী মওলেদী বশীরিন নাযীর ৬০৪ হিজরী]


√ ৮ নং দলিল:-

জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) এর মতামত :-

قال الحافظ جلال الدين عبد الرحمن بن أبي بكر السيوطي في رسالة “حسن المقصد” : وقد ظهر لي تخريجه على أصل آخر وهو ما أخرجه البيهقي عن أنس أن النبي صلى الله عليه وآله وسلم عق عن نفسه بعد النبوة ، مع أنه قد ورد أن جده عبد المطلب عق عنه في سابع ولادته ، والعقيقة لا تعاد مرة ثانية ، فيحمل ذلك على أن الذي فعله النبي صلى الله عليه وآله وسلم إظهار للشكر على إيجاد الله إياه رحمة للعالمين ، وتشيع لأمته- لذلك فيستحب لنا أيضا إظهار الشكر بمولده بالاجتماع وإطعام الطعام ونحو ذلك من وجوه القربات وإظهار المسرات-


হাফিজ জালালুদ্দিন আব্দুর রহমান বিন আবুবাকার আস-সূয়ুতী (রহঃ) “হাসানুল মাকসিদ” রেসালার মধ্যে বাইহাকী শরীফ এর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি হাদিস নকল করেন,

হাদীসটি হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত প্রকাশের পর নিজে আকিকা (জন্মদিনের শুকরিয়ার্থে পশু যাবেহ) করেছিলেন । তিনি বলেন আব্দুল মোতালিব নবী (ﷺ) এর জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করেছিলেন, আকিকা দ্বিতীয় বার করার আর প্রয়োজন ছিল না । বিশ্বনবী (ﷺ) রাহমাতুল্লিল আলামিন হওয়ায় আল্লাহর সৃষ্টির শুকরিয়া আদায় করেছিলেন । যাতে তা উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে । এইজন্যই নবী (ﷺ) মিলাদ বা জন্ম উপলক্ষে মাহফিল করা, খাবার-দাবার করা, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আনন্দের প্রকাশ ঘটানো ইত্যাদি হলো- মুস্তাহাব ।

“হাসানুল মাকসিদ” (ওয়া হিয়া ফি কিতাবিহিল-হাবী ১/১৯৬)


√ ৯ নং দলিল;-

হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহঃ) তিনি আশরাফ আলী থানবী,রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সহ সকল বড় বড় উলামায়ে দেওবন্দীদের পীর। তিনি তাঁর কিতাবে বর্ননা করেন —

ﻣﻮﻟﻮﺩ ﺷﺮﻳﻒ ﻛﻮ ﺫﺭﻳﻌﻪ ﺑﺮﻛﻠﺖ ﺳﻤﺠﻪ ﻛﺮ ﻫﺮ ﺳﺎﻝ ﻣﻨﻌﻘﺪ ﻛﺮﺗﺎﻫﻮﻥ

ﺍﻭﺭﻗﻴﺎﻡ ﻛﮯ ﻭﻗﺖ ﺑﮯ ﺣﺪ ﻟﻄﻒ ﻭﻟﺬﺕ ﭘﺎﺗﺎﻫﻮﯼ

অর্থ- মীলাদ শরীফের মাহফিলকে বরকত লাভের উসিলা মনে করে আমি প্রতি বছর মীলাদ শরীফ এর মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম শরীফ করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি | (ফয়সালায়ে হাফতে মাসয়ালা, পৃষ্ঠা ৫)


(৩) মিলাদুন্নবীর সঙ্গে ঈদ শব্দ যুক্ত করা ও আনন্দিত হওয়া :-


ঈদ শব্দের অর্থ হলো খুশি । অনেকেই বলে থাকেন বছরে ঈদ দুটি ,এছাড়া আর ঈদ নেই । তাদের মনে রাখা দরকার জুমার দিনকেও ঈদের দিন বলা হয়েছে ।

ঈদ একটি সাধারন শব্দ যার অর্থ হলো খুশি,যেকোনো খুশির ক্ষেত্রে এ শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে । এই বিষয়ে আমি খুব বেশি আলোচনা না করে শুধু একটি দলিল পেশ করছি, যার দ্বারা আপনাদের ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ।


আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন কারীমের মধ্যে বলেন :-

قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ •

ঈসা ইবনে মরিয়ম বলেন হে আল্লাহ ! হে আমাদের পালনকর্তা ! আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে ঈদ (আনন্দোৎসব) হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রুযী দিন। আপনিই শ্রেষ্ট রুযীদাতা। (সূরা মায়িদা ১১৪)


আকাশ থেকে খাবার অবতীর্ণ হওয়া আল্লাহর নিয়ামত, আর এই নিয়ামত লাভ করার জন্য ঈদ উৎসব করার সরাসরি উদাহরণ আমরা পবিত্র কুরআন মাজীদে দেখতে পেলাম। এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে খাঞ্চাভরা খাদ্য আসলে তা যদি হযরত ঈসা (আঃ)-এর ভাষায় পূর্ব ও পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ, উৎসবের কারণ ও আল্লাহর নিদর্শন হয়, তাহলে সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম সত্ত্বা, রহমতের ভান্ডার, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(ﷺ) এর মত মহান নিয়ামতের শুভাগমনের দিন কতইনা মর্যাদাবান, গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের দিন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।


সেই নবীজির জন্ম দিনে আনন্দিত হওয়া মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ-

হে হাবীব (ﷺ) আপনি বলুন! আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত ধন দৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা উত্তম। (সূরা ইউনুস:৫৮)


√ পবিত্র কোরআন ও ইসলাম আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত । আর এই অনুগ্রহ রহমত লাভের জন্য আল্লাহ মুমিনদেরকে খুশি থাকতে বলেছেন । একটু চিন্তা করুন আমাদের নবী(ﷺ) হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন, যে নবীর জন্য আমরা কোরআন পেয়েছি, যে নবী(ﷺ)র জন্য আমরা ইসলাম পেয়েছি , অজ্ঞতা থেকে মুক্তি পেয়েছি, সেই নবী(ﷺ)র আগমন দিবসে কি খুশি হওয়া যাবে না ?

আমাদের নবী(ﷺ) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত ও সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর অনুগ্রহ । তাই এই দিন নবীজি(ﷺ) র আগমন উপলক্ষে আনন্দিত বা খুশি হওয়া অবশ্যই এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য ।


√ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ আদ দুররুল মুনছুর এ উল্লেখ করেন- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমে দ্বীন বুঝানো হয়েছে আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দু’আলম প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন -

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ

অর্থাৎ হে হাবীব ! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত করেই প্রেরণ করেছি।

(সূরা আম্বিয়া আয়াত নং- ১০৭)


(৪) মিলাদুন্নবী পালনের উপকারিতা :-


√ মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপকারিতা সম্পর্কে বুঝার জন্য এই হাদীসই যথেষ্ট।


জুরকানী শরীফে রয়েছে, যা আবু লাহাব সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

عن محمد بن مسلم بن شهاب الزهري : قالَ عروةُ: وثُوَيبةُ مولاةُ أبي لَهَبٍ أعتقَها فأرضَعتِ النَّبيَّ ﷺ فلمّا ماتَ أبو لَهَبٍ أرِيَهُ بعضُ أَهْلِهِ في النَّومِ بشرِّ حيبةٍ فقالَ لَهُ: ماذا لَقيتَ؟ فقالَ أبو لَهَبٍ: لم ألقَ بعدَكُم رخاءً غيرَ أنِّي قد سُقيتُ في هذِهِ منِّي بعِتاقَتي ثوَيْبةَ وأشارَ إلى النُّقَيْرةِ الَّتي بينَ الإبهامِ والَّتي تليها منَ الأصابعِ •


অর্থাৎ- হযরত ছুয়াইবিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেন, হযরত আব্বাস (রাঃ) এরশাদ করেন যে, যখন আবু লাহাব মারা যায় তার এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে বড়ই খারাপ অবস্থায় আছে এবং সে বলছিল, তোমাদের কাছ থেকে আসার পর আমার কোনো শান্তি নসীব হয়নি। হা এতটুকু অবশ্যই যে, প্রত্যেক সোমবার আমার আযাব হালকা করে দেয়া হয়। তা শুনে হযরত আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটি এ জন্যই যে, নবী করিম (ﷺ) সোমবার দিন দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন। আর ছোয়াইবা নামী জনৈকা ক্রীতদাসী তাকে নবী করিম (ﷺ)র আগমনের শুভ সংবাদ দিয়েছিল বিধায় সন্তুষ্টি চিত্তে আবু লাহাব তাকে আজাদ করে দিয়েছিল।

সূত্রঃ (ফাতহুল বারি ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা, জুরকানী শরীফ ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা) হাদীসখানা আল্লামা বদরুদ্দিন আঈনি তার ওমদাতুল কারী শরহে ছহীহ বুখারীতে ২য় খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন।)


উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা আবুল খায়ের শামসুদ্দীন ইবনে জাজরী (রহঃ) বলেছেন- রাসূলে মক্ববুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বেলাদাতের রাত্রে তাঁর আগমনের সু-সংবাদ শুনে খুশী হওয়ার কারনে যদি এমন জগন্য কাফের যার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে পবিত্র কুরআনে সূরা-লাহাব নাযিল করা হয়েছে, এমন কাফেরের শাস্তিক যদি হালকা করা হয়, তাহলে একজন তাওহীদবাদী মুসলমান যদি তাঁর আগমণের তারিখে খুশী হয়ে সাধ্যমত সম্পদ ব্যয় করে, তাহলে প্রতিদানের অবস্থা কেমন হতে পারে? উনি বলেন- আমার জীবনের শপথ, নিশ্চয়ই তাঁর প্রতিদান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এই হবে যে, আল্লাহ পাক তাঁকে বিশেষ অনুগ্রহে জান্নতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।


👉এ ছাড়া পার্থিব জীবনে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালনের মধ্য দিয়ে যে উপকার পাওয়া যায় তা হলো-


√ মুসলমানদের ঐক্য সাধিত হয় ।

√ সাধারণ মুসলমান ধর্মের প্রতি উৎসাহিত হয় ।

√ নাবী (ﷺ) এর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় ।

√ মানুষ নাবীর (ﷺ) সিরাত সম্পর্কে অবগত হয় ।

√ শিশুরা নাবী (ﷺ) এর মর্যাদা সম্পর্কে ছোট থেকেই অবগত হতে পারে, ইত্যাদি।


(৫) প্রচলিত মিলাদুন্নাবী (ﷺ) পালন ।


মিলাদুন্নবী পালন করা নিঃসন্দেহে জায়েজ। এখন প্রশ্ন হলো প্রচলিত মিলাদ,যেমন মাহফিল সাজানো,আলোচনা করা,নবীজির স্মরণে নাত শরীফ পাঠ করা, সিরাতুন নবী(ﷺ)র জলসা করা, সম্মিলিত ভাবে দরুদ সালাম পেশ করা, ইত্যাদি এমন ভাবে আগে তো কেউ পালন করেননি,যা কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে তার দ্বারা পরিষ্কার হয়েছে যে ,আগে সাধারণ ভাবে মিলাদুন্নবী(ﷺ)পালন করা হতো, তাহলে আপনারা এত গুরুত্ব সহকারে মিলাদুন্নবী(ﷺ) পালন করছেন কেন?


এর উত্তর হলো প্রচলিত পদ্ধতিতে মালাদুন্নাবী পালন করা মুস্তাহাব । ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-

اِنَّ الْبِدْعَۃَ الْحَسَنَۃَ مُتَّفَقٌ عَلٰی نُدْبِہَا وَعَملُ الْمَوْلِدِ وَاِجْتِمَاعُ النَّاسِ لَہٗ کَذَالِکَ اَیْ بِدْعَۃٌ حَسَنَۃٌ ۔

(تَفْسِیْرِ رُوْحُ الْبَیَانِ جلد ۹ صفحہ ۵۷)

অর্থাৎ বিদ‘আতে হাসানার কাজ মোস্তাহাব হওয়ার উপর সকল বিজ্ঞ আলিমদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং মীলাদ শরীফের আমল ও সেটার উদ্দেশ্যে লোকদের মাহফিল করা অনুরূপ মুস্তাহাব।

[তাফসীর রুহুল বয়ান, ৯ম খণ্ড, পৃ.৫৬]


মিলাদুন্নবী(ﷺ) উপলক্ষে প্রচলিত পদ্ধতিতে মিলাদ মাহফিল করা, নাত শরীফ পাঠ করা, মানুষদের খাওয়ানো, দান-খয়রাত করা ইত্যাদি খুবই ভালো কাজ যা বেদাতে হাসানা অর্থাৎ ভালো বেদাত। যা পালন করলে নেকি পাওয়া যাবে, তবে না করলে গুনাহ হবে না ।

নবীজি হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন :-


عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رضي الله عنه قال قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْء •


জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলামে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ চালু করলো সে এ চালু করার সাওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর ‘আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ সাওয়াব সে পাবে। অথচ এদের সাওয়াব কিছু কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করলো, তার জন্য তো এ কাজের গুনাহ আছেই। এরপর যারা এ মন্দ রীতির উপর ‘আমল করবে তাদের জন্য গুনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে ‘আমলকারীদের গুনাহ কম করবে না।

(মুসলিম ১০১৭, মেশকাত ২১০)


তবে কঠোরতার সঙ্গে এর বিরোধিতা করা যাবে না ।


(৬) ইয়াওমে মিলাদুন্নবী বা নবী(ﷺ)এর জন্ম দিনে করণীয় ও বর্জনীয় :-


👉মিলাদুন্নবী(ﷺ)উপলক্ষে করণীয়

√ রোজা রাখা।

√ দান করা।

√ বেশী বেশী দরুদ ও সালামপাঠ করা।

√ সীরাতুন্নবী(ﷺ) বর্ণনা করা।

√ নবী (ﷺ) এর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরতে মানুষকে উৎসাহিত করা ।

√ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা।

√ তাবারকের ব্যবস্থা করা ।

√ নবীজির আগমন উপলক্ষে আনন্দিত হওয়া।

√ ইসলামিক ঝান্ডা উত্তোলন করা ইত্যাদি


👉মিলাদুন্নবী(ﷺ)উপলক্ষে বর্জনীয়

√ পটকা ফাটানো

√ গান বাজনা করা

√ শরীরে রং ব্যবহার করা

√ দান করতে কৃপণতা করা

√ প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত ফুজুল খরচ করা

√ মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চাঁদা আদায় করে ব্যক্তিগত কাজ করা ।

√ জোর করে চাঁদা আদায় করা ।

√ চাঁদা না দিলে মিলাদুন্নবীতে আসতে বাধা দেওয়া । ইত্যাদি।

(৬) উপসংহার

সমস্ত আলোচনা সামনে রেখে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে পারি মিলাদুন্নবী শরীয়ত সম্মতভাবে পালন করা অবশ্যই জায়েজ ।

® মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তানজিম ®