ইসলামের কন্ঠইসলামের কন্ঠ
সম্পাদকীয়আর্কাইভআমাদের পরিচিতিযোগাযোগের মাধ্যম
হাদীস শরীফ

দুরুদ শরীফ ও সালাম প্রেরণের ফজিলত

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরুদ বা সালাত ও সালাম প্রেরণের অসংখ্য ফজিলত ও গুরুত্ত রয়েছে। বেশী গুরুত্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হল- ইহা এমন একটি কাজ যা আল্লাহ তায়ালা্ ও ফেরেশতাগণ করে থাকেন। আর আল্লাহ নিজে শরীক থেকে মুমিন দেরকে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক বিভিন্ন নবী-রাসুলের সম্মানের কথা বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু কোন হুকুম বা সম্মান প্রদর্শেনের ক্ষেত্রে বলেননি ‘‘আমি এ কাজ করি’’ সুতরাং তোমরাও কর। একমাত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সালাত ও সালাম পাঠের ক্ষেত্র ব্যতীত।

মোহাম্মদ আব্দুল আজিম
দুরুদ শরীফ ও সালাম প্রেরণের ফজিলত

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরুদ বা সালাত ও সালাম প্রেরণের অসংখ্য ফজিলত ও গুরুত্ত রয়েছে। বেশী গুরুত্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হল- ইহা এমন একটি কাজ যা আল্লাহ তায়ালা্ ও ফেরেশতাগণ করে থাকেন। আর আল্লাহ নিজে শরীক থেকে মুমিন দেরকে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক বিভিন্ন নবী-রাসুলের সম্মানের কথা বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু কোন হুকুম বা সম্মান প্রদর্শেনের ক্ষেত্রে বলেননি ‘‘আমি এ কাজ করি’’ সুতরাং তোমরাও কর। একমাত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সালাত ও সালাম পাঠের ক্ষেত্র ব্যতীত।

দুরুদ শরীফ পাঠ কারীর জন্য আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত অনেক সওয়াব রয়েছে যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া ইতিহাস অন্বেষণ করলে আমরা দেখতে পা্ই যে বহু আশিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কোন নির্দিষ্ট দুরুদ শরীফ পাঠ করার কারণে কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন, অনেকে কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন, আবার অনেকের বড় ধরণের হাজত পূরণ হয়েছে। ঐ সকল দুরুদ শরীফ পাঠ করে এখনও মুমিনগণ উপকৃত হচ্ছেন।

বর্তমানে পঠিত দুরুদ শরীফের মধ্যে অনেক দুরুদ শরীফ আছে যা হাদীস শরীফ বর্ণিত, আর অনেক আছে যা সুপ্রসিদ্ধ্ বুজুর্গানে কেরাম ইলহামের মাধ্যমে বা স্বপ্নযোগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে নির্দেশিত হয়ে আমল করে আসছেন। তাই এগুলো থেকে যে কোন দুরুদ পাঠ করলেই আল্লাহর নির্দেশ পালিত হবে এবং সওয়াব অর্জিত হবে। নিম্নে কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের বর্ণনার আলোকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরুদ বা সালাত ও সালাম প্রেরণের ফজিলত ও গুরুত্ত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

আল্লাহর বাণী-

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

অনুবাদঃ ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগন নবীর প্রতি সালাত তথা রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগন ! তোমরাও নবীর প্রতি সালাত প্রেরণ কর এবং তার প্রতি সালাম প্রেরণ কর যথাযথ সম্মানের সাথে।’’ (সুরা আহযাব-৫৬)

عن ابي هريرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من صلى على صلاة واحدة صلى الله عليه عشرا- (مسلم، أبو داود)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে। আল্লাহ তায়ালা তার উপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন। (মুসলিম ও আবু দাউদ)

عن عمار بن ياسر رضى الله تعالى عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله وكل بقبري ملكًا أعطاه أسماع الخلاءىق فلا يصلى على احد إلى يوم القيامة الا ابلغنى باسمه واسم ابيه هذا فلان ابن فلان قد صلى عليك - (الترغيب والترهيب)

হযরত আম্মার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন- আল্লাহ তায়ালার একজন ফেরেশতা আছেন যাকে আল্লাহ পাক সৃষ্টি জগতের সকল ভাষা জ্ঞান দান করেছেন। তিনি আমার আমার কবর শরীফে দন্ডায়মান থাকবেন। যে ব্যাক্তি আমার প্রতি দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, আমার কাছে তিনি তা পৌছে দিবেন। (বুখারী)

عن عبدالله ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان لله عز وجل ملائكته سياحين في الأرض يبلغنى من امتى السلام.

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ তায়ালার কতক ফেরেশতা আছেন যারা পৃথিবীতে ভ্রমন করেন এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌছে দেন। (নাছায়ী ও দারেমী)

رسول الله صلى الله عليه وسلم قال :اكثروا من الصلوة على لان اول ما تسالون في القبر عنى.

ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়ুতী (রঃ) তার ‘‘আনিছুল জালিছ’’ নামক কিতাবে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন। যাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- اصحابى وإخواني صلو على في كل يوم الاثنين والجمعة بعد وفاتى اسمع صلواتكم بلا واسطة.

হে আমার প্রিয় সাহাবীগণ! তোমরা আমার ওফাতের পর প্রত্যেক সোমবার ও শুক্রবারে আমার উপর দুরুদ পাঠ করিও, কারণ আমি তোমাদের দুরুদ কোন মাধ্যম ছাড়াই শুনতে পাই। (খাসায়েসুল আকবার)

প্রসিদ্ধ দুরুদ শরীফের কিতাব ‘‘দালায়েলুল খায়রাত’’ এর খুতবায় আরও একখানা হাদিস বর্ণিত আছে-

وقيل لرسول الله ارايت صلوة المصلين عليك ممن غاب عنك ومن يأتي بعدك ماحالهما عندك فقال اسمع صلوة أهل محبتي واعرفهم وتعرض على صلوة غيرهم عرضًا.

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যারা অনুপস্থিত বা আপনার ওফাতের পর আপনার উপর দূরুদ শরীফ পাঠ করবে, ইহা আপনার দরবারে কিভাবে পৌছানো হবে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, যারা আমার আশিক তাদের দুরুদ আমি নিজেই শুনতে পাই এবং তাদের পুরো পরিচয় পাই। আর অন্যান্যদের দুরুদ ফেরেশতাদের মাধ্যমে আমার নিকট পৌছানো হয়। (খাসায়েসুল আকবার)

আল্লামা ইবনুল কাইয়ূম (রাহঃ) তাঁর ‘‘জালাউল আফহাম’’ গ্রন্থে একখানা হাদীস উল্লেখ করেন। যাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ليس من عبد يصل على الا بلغني صوته حيث كان قلنا بعد وفاتك قال وبعد وفاتي

কোন বান্দা যে কোন জায়গা থেকে আমার উপর দুরুদ পাঠ করলে আমার নিকট তার আওয়াজ পৌছে। আমরা আরজ করলাম- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ওফাতের পরেও নাকি? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- হ্যাঁ। (জালাউল আফহাম-পৃষ্টা ৭৩)

عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى على صلاة واحدة صلى الله عليه عشر صلوات وحطت عنه عشر خطيىءات ورفعت له عشر درجات - (نساءى، مسند احمد بن حنبل)

হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি দুরুদ শরীফ একবার পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার উপর ১০টি রহমত নাজিল করেন, ১০টি গুণাহ মাফ করেন ও ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল)

হযরত আনাস বিন রবিআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি ১০বার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, যে পর্যন্ত সে দুরুদ পাঠ করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা তার প্রতি রহমত নাযিল করতে থাকবে। (খাসায়েসুল কুবরা)

হযরত আবু তালহা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার কাছে এক ফেরেশতা এসে বললঃ আপনার উম্মতের যে কেউ যখন আপানার প্রতি একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, তখন আল্লাহ তায়ালা তার উপর ১০টি রহমত নাজিল করেন। কেউ আপানার প্রতি সালাম পাঠ করলে আল্লাহ তয়ালা তার উপর ১০বার সালাম প্রেরণ করবেন। এ বিষয়টি আপনার জন্য আনন্দদায়ক নয় কি? (খাসায়েসুল কুবরা)

হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার প্রতি দুরুদ শরীফ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দুরূদ পাঠ করা তোমাদের গোনাহের কাফফারা। (খাসায়েসুল কুবরা)

عن ابي هريرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ما من احد يسلم علي الا رد الله علي روحي حتى ارد عليه السلام.

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন ব্যাক্তি আমার প্রতি সালাম দিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার রুহ আমার প্রতি ফিরিয়ে দিবেন। যাতে আমি তার সালামের জওয়াব দিতে পারি। (বায়হাকী ও আবু দাউদ)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- যে ব্যাক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে। আল্লাহ তায়ালা তার উপর ৭০বার দুরুদ পাঠ (৭০টি রহমত নাজিল) করবেন। (আহমদ)

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ان اول الناس بي يوم القيامة أكثرهم على صلوة - (ترمذي، بيهقي، الترغيب والترهيب )

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন সে ব্যাক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সর্বাধিক দুরুদ শরীফ পাঠ করবে। (তিরমিযী, বায়হাকী, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব)

ইমাম সাখাবী (রাহ) আল কাউলুল বাদী কিতাবে উল্লেখ করেন- “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দুরুদ শরীফ পাঠ করো, কারণ কবরে প্রথমে আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।” উক্ত হাদীসের মর্মানুযায়ী এ কথা বুঝা গেল যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর বেশী বেশী দুরুদ শরীফ পাঠ করলে কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা সহজ হবে।

عن ابى ابن كعب رضى الله تعالى عنه قال : قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم إني اكثر الصلوة عليك فكم اجعل لك من صلوتى فقال ما شئت. قلت الربع قال ما شئت فان زدت فهو خير لك قلت النصف قال ما شئت فان زدت فهو خير لك قلت الثلثين قال ما شئت فان زدت فهو خير لك قلت اجعل لك صلوتى كلها قال إذا يكفى همك ويكفر لك ذنبك -

হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার উপর সর্বাধিক দুরুদ শরীফ পাঠ করতে আগ্রহী, আমার দোয়ার মধ্যে কি পরিমান সময় দুরুদ শরীফ পাঠে ব্যয় করব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- যতটুকু তোমার ইচ্ছা। আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার দোয়ার এক চতুর্থাংশ? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- যতটুকু তোমার ইচ্ছা, তবে এর চেয়ে বেশী দুরুদ শরীফ পাঠ করলে তোমার জন্য ভালো হবে। আমি পুনরায় আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার দোয়ার দু‘তৃতীয়াংশ? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- যতটুকু তোমার ইচ্ছা, তবে এর চেয়ে বেশী দুরুদ শরীফ পাঠ করলে তোমার জন্য ভালো হবে। আমি পুনরায় আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তবে আমি আমার দোয়ার সমস্ত সময়টুকু আপনার প্রতি দুরুদ শরীফ পাঠের জন্য নির্ধারিত করলাম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- এরূপ করা তোমার সকল দুঃশ্চিন্তার জন্য যথেষ্ট হবে। (তিরমিযী, শুয়াবুল ঈমান- ঈমাম বায়হাকী)

رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ان الله حرم على الأرض ان تأكل اجساد الأنبياء.

হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তোমরা জুমআ বারে আমার উপর অধিক পরিমানে দুরুদ শরীফ পাঠ কর। কারণ এ দিন এমন এক বরকতময় দিন, যে দিন ফেরেশতা নাজিল হন। যখন কোন লোক আমার উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করে, সাথে সাথে ফেরেশতাগণ তার দুরুদ শরীফ আমার নিকট পেশ করেন। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ওফাতের পরও কি এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে? তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন- হ্যাঁ, কেননা আল্লাহ তায়ালা মাটির জন্য নবীগণের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ)

عن عمر ابن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال ان الدعاء موقوف بين السماء والأرض لا يصعد منه شيء حتى تصل على نبيك.

হযরত উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, দোয়া আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে। যখন দুরুদ শরীফ পাঠ করা হয়, তখন দোয়া উপরে যায়। (খাসায়েসুল কুবরা)

হযরত উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আমার উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে তোমাদের মাহফিল সমুহকে সুসজ্জিত করবে। যার ফলে এ দুরুদ শরীফ পাঠ করা কিয়ামতের দিন তোমাদের জন্য আলো স্বরূপ হবে। (খাসায়েসুল আকবার)

رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : الصلوة على نور على الصراط ومن صل يوم الجمعة ثمانين مرة غفر الله له ذنوب ثمانين عاما.

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- তোমরা আমার উপর দুরুদ শরীফ পাঠ কর, কেননা এটা কিয়ামতের দিন পুলসিরাতে অন্ধকারে নূর ও জ্যোতির কাজ দিবে। আর জুমআর দিন যে ৮০ বার দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাহার ৮০ বছরের গুণাহ মাফ করে দিবেন। (মুকাশাফাতুল ক্বুলুব)

عن على رضى الله تعالى عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : البخيل من ذكرت عنده فلم يصل على.

হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ঐ ব্যাক্তি কৃপন যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে আমার উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করল না। (তিরমিযী, নাসাঈ)

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من صلى على في يوم مائة مرة قضى الله له مائة حاجة، سبعين منها لاخرته وثلاثين منها لدنياه - (كنز العمال)

হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যাক্তি ফজরের নামাজের পর অন্য কথা বলার পূর্বে ১০০ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ১০০টি হাজত পূর্ণ করবেন। তন্মধ্যে ৩০ টি দুনিয়ার এবং ৭০ টি আখিরাতের। (আল কাউলুল বাদী)

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من صلى على في يوم مائة صلاة حين يصل الصبح قبل ان يتكلم قضى الله له مائة حاجة يعجل له منها ثلاثين ويدخر له سبعين.

হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যাক্তি প্রত্যেহ আমার উপর ১০০ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ১০০টি হাজত পূর্ণ করবেন। তন্মধ্যে ৩০ টি দুনিয়ার এবং ৭০টি আখিরাতের। (কানযুল উম্মাল)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যারা কোন মজলিশে বসে আল্লাহর জিকির করে না ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরুদ শরীফ পাঠ করে না, তারা জালেম। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন। (আবু দাউদ, খাসায়েসুল কুবরা)

عن على رضى الله تعالى عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم انه قال ثلاثة تحت ظل عرش الله يوم القيامة يوم لاظل الا ظله. قيل من هم يا رسول الله. قال من فرج عن مكروب من امتى وأحيا سنتي وأكثر الصلوة على -

হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- কিয়ামতের দিন তিন ব্যাক্তি আল্লাহর আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে। যে দিন আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। জিজ্ঞেস করা হল- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সে তিন ব্যাক্তি কারা? তিনি বললেন- ১. যে আমার উম্মতের কষ্ট লাঘব করবে, ২. যে আমার সুন্নাতকে নব জীবন দান করবে ও ৩. যে আমার উপর অধিক দুরুদ শরীফ পাঠ করবে। (আল কাউলুল বাদী)

হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যাক্তি সকাল-বিকাল আমার উপর দশবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, সে ব্যাক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভে ধন্য হবে। (তাবরানী)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি জুমআর দিন আসরের নামাজের পর নিজ জায়গা থেকে উঠার আগে ৮০ বার اللهم صل على سيدنا محمد النبى الامى وعلى اله وسلم تسليما – এ দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের এবাদতের (নফল) সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে। (আদ দূররুল মানজুদ)

হযরত রুয়াঈফী বিন ছাবিত আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি اللهم صل على محمد وأنزله المقعد المقرب عندك يوم القيامة – এ দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার উপর শাফায়াত করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। (খাসায়েসুল আকবার)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি صل الله على محمد – এ দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ পাক তার জন্য ৭০ টি রহমতের দরজা খুলে দিবেন এবং মানুষের অন্তরে তার জন্য ভালবাসা ঢেলে দিবেন। (খাসায়েসুল আকবার)

আল্লামা হক্কী নাজিলী (রাহঃ) তাঁর ‘খাজিনাতুল আসরার’ নামক কিতাবে লিখেছেন, যে ব্যাক্তি আয়াতুল কুরসী এবং

اللهم صل على سيدنا مولنا محمد وعلى ال سيدنا محمد في كل لمحة ونفس بعدد كل معلوم لك

এ দুরুদ শরীফ পাঠ করবে সে ব্যাক্তি রাসূল (সাঃ) এর দিদার লাভে ধন্য হবে। (খাসায়েসুল আকবার)

আল্লামা সাখাবী (রাহঃ) তাঁর ‘আল কাউলুল বাদী’ নামক কিতাবে লিখেছেন, নিম্নোক্ত দুরুদ শরীফ সর্বদা বেশী বেশী পাঠ করলে স্বপ্নযোগে রাসূল (সাঃ) এর দিদার নসীব হবে। দুরুদ শরীফ খানা হল-

اللهم صل على روح محمد في الأرواح اللهم صل على جسد محمد في الاجساد اللهم صل على قبر محمد في القبور 

اللهم صل على محمد كما أمرتنا ان تصلي عليه اللهم صل على محمد كما هو أهله اللهم صل على محمد كما تحب وترضى له

‏قال بن حجر رحمه الله : من أعظم الأشياء الدَّافعة للطاعون وغيره من البلايا العظام كثرة الصلاة على النبي

بذل الماعون لابن حجر | صـ 333

ইব‌নে হাজার আসকালানী (রাহঃ) ব‌লেন, মহামারীসহ যে কো‌নো বিপদ থে‌কে রক্ষা পাবার উপায় হ‌লো বে‌শি বে‌শি দরুদ শরীফ পাঠ করা। (বাযলুল মাউন : ৩৩ পৃষ্ঠা)

শায়খুল ইসলাম ড. তাহিরুল কাদরী দুরুদ শরীফ এর ফযীলত সম্পর্কে বলেন- দুরুদ শরীফ একবার পাঠ করলে ১০টি রহমত নাজিল হয়, ১০টি গুণাহ মাফ হয় ও ১০টি স্তর বৃদ্ধি হয়। ইহা দুরুদ শরীফ পাঠ কারীর জন্য আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত সওয়াব যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন। আর সালামের জওয়াব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদান করেন। যার ফলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সালাম প্রদান কারীর পরিচয় হয়, যোগাযোগ সৃষ্টি হয় ও ঘনিষ্টতা বাড়ে। তিনি আরও বলেন-

দুরুদ শরীফ পাঠ করলে সওয়াব পাওয়া যায়, আর সালাম প্রদান করলে জওয়াব পাওয়া যায়।

দুরুদ শরীফ পাঠ করলে উজরত পাওয়া যায়, আর সালাম প্রদান করলে কুরবত পাওয়া যায়।

একজন আশিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য সওয়াব এর চেয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে জওয়াব পাওয়া টা খুব বেশী সৌভাগ্যের, আর তাহার নৈকট্য হাসিল করা তার চেয়েও বেশী সৌভাগ্যের ব্যাপার। কারণ যে ব্যাক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নৈকট্য পেয়েছে তার দুনিয়া ও আখেরাত ধন্য। তা্ই প্রকৃত আশিকে রাসুল গণ দুরুদ শরীফ পাঠের চেয়ে তাঁকে সালাম জানানোতেই বেশী আনন্দ পায় এবং গুরুত্ত দেয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালাই সালাম জানানোকে বেশী গুরুত্ত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর বাণী-

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا -

অনুবাদঃ নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগন নবীর প্রতি সালাত তথা রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগন ! তোমরাও নবীর প্রতি সালাত তথা দুরূদ প্রেরণ কর এবং তার প্রতি সালাম প্রেরণ কর যথাযথ সম্মানের সাথে। এখানে تَسْلِيمًا শব্দের উল্লেখ পূর্বক সালামের গুরুত্ত বুঝানো হয়েছে।

হাজী এমদাদ উল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহঃ) তার লিখিত ‘ফয়সালায়ে হাফত মাসআলা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করি, আর মিলাদে দাঁড়িয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দিতে আমার খুব মজা লাগে।

তাছাড়া ইতিহাস অন্বেষণ করলে আমরা দেখতে পা্ই যে বহু আশিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কোন নির্দিষ্ট দুরুদ শরীফ বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা সংবলিত কবিতা পাঠ করার কারণে কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন, অনেকে কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন, আবার অনেকের বড় ধরণের হাজত পূরণ হয়েছে। ঐ সকল দুরুদ শরীফ পাঠ করে এখনও মুমিনগণ উপকৃত হচ্ছেন।

রাওজাতুল আহবার নামক কিতাবে এমাম শাফেয়ী (রাহঃ) এর বিশিষ্ট ছাত্র এমাম ঈসমাঈল ঈবনে ঈব্রাহীম মুজানী থেকে বর্ননা করা হয়েছে। তিনি বলেন- এমাম শাফেয়ী (রাহঃ) এর এন্তেকালের পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন- আল্লাহ পাক আমাকে ক্ষমা করতঃ সম্মানের সাথে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।ঈহা হলো একটি দুরুদ শরীফের বরকতে যা আমি সর্বদা পাঠ করতাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম সে দুরুদ শরীফ কোনটি? যা আপনি সর্বদা পাঠ করতেন। তিনি উত্তর দিলেন-

اللهم صل على محمد كلما ذكره الذاكرون وصل على محمد كلما غفل عن ذكره الغافلون 

অন্য এক বর্ণনায় আছে, অল্লামা ঈবনে জওযী (রাহঃ) বলেন- এমাম শাফেয়ী (রাহঃ) এর এন্তেকালের পর আমি রাসূল (সাঃ) কে স্বপ্নে দেখে আরজ করলাম, ঈয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! এমাম শাফেয়ী (রাহঃ) এন্তেকাল করেছেন। তিনি আপনার পক্ষ থেকে কি কোন পুরষ্কার লাভ করেছেন? রাসূল (সাঃ) বললেন- হ্যাঁ, আমি তার জন্য দোয়া করেছি, হাশরের দিন আল্লাহ তাহাকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন। আমি আরজ করলাম কেন আমলের কারণে তিনি এত সৌভাগ্যবান হলেন? রাসূল (সাঃ) বললেন- সে আমার প্রতি এমন একটি দুরুদ পাঠ করত যা অদ্যবধি কেউ পাঠ করেনি। আমি আরজ করলাম, ঐ দুরুদ শরীফ খানা কি? রাসূল (সাঃ) বললেন- اللهم صل على محمد كلما ذكره الذاكرون وصل على محمد كلما غفل عن ذكره الغافلون

বাদশাহ সুলতান মাহমুদ গজনীর শাসনামলে এক গরীব ধার্মিক বসবাস করতেন।অভাবের কারণে তিনি খুব বেশী রিন গ্রস্থ ছিলেন। রিন দাতাদের যাতনায় তিনি ঘর হতে বের হওয়ার সুয়োগ পাচ্ছিলেন না। তিনি নবী করিম (সাঃ) এর উপর বেশী বেশী দুরুদ শরীফ পাঠ করতেন। তার অভাব ও রিনমুক্তির জন্য এঈ দুরুদ শরীফকেঈ আল্লাহর দরবারে ওসীলা হিসেবে পেশ করলেন। এমতাবস্থায় একরাতে তিন স্বপ্নে দেখলেন রাসূল (সাঃ) তাকে বলছেন- “তুমি সুলতান মাহমুদ গজনীর নিকট গিয়ে বলিও, তিনি যে প্রতিদিন ৬০ হাজার বার দুরুদ শরীফ পাঠ করেন তার হাদিয়া আমার কাছে পৌছে, তিনি যেন তোমার অভাব দূর হওয়ার জন্য সাহায্য করেন।” ঐ ব্যাক্তি বাদশার নিকট এ সংবাদ পৌছালে বাদশা তাকে অনেক স্বর্ণমুদ্রা দান করলেন যাতে ঐ ব্যাক্তি অভাব ও রিন থেকে মুক্ত হয়ে ধনী হয়ে গেল। ঐ ব্যাক্তি বাদশাকে জিজ্ঞেস করল- আপনি এত ব্যস্ততার মধ্যে কিভাবে প্রতিদিন ৬০ হাজার বার দুরুদ শরীফ পাঠ করেন? বাদশা বললেন- আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর ৩ বার ও মাগরিবের নামাজের পর ৩ বার নিম্নোক্ত দুরুদ শরীফ পাঠ করি যাতে আমি ৬০ হাজার বার দুরুদ শরীফ পাঠ করার সওয়াব পেয়ে যাঈ। দুরুদ শরীফ খানা হল-

اللهم صل على سيدنا مولنا محمد مختلف الملوان وتعاقب العصران وكر الجديدا وستقبل الفرقدان بلغ روححو وارواح اهل بيته من تحية وسلام وبارك وسلام عليه تسليما كثيرا كثيرا –

মরোক্কর সুস শহরের অধিবাসী শাযিলিয়া তরীকার শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন সুলাইমান যাজুলি (রাহঃ) একদা ফাস শহরের নিকটবর্তী গ্রামে গিয়েছিলেন, সেখানে জোহরের নামাজের জন্য ওযুর পানি অন্বেষণ করতে গিয়ে একটি কূপের সন্ধান পেলেন, কিন্তু পানি উঠানোর কোন ব্যবস্থা না থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন কূপের অনতিদূরে একটি বাসস্থান দেখতে পেলেন যার জানালা দিয়ে ৮/৯ বছরের একটি বলিকা ডেকে বলল- হে শায়খ আপনি পেরেশান কেন? তখন তিনি বললেন জোহরের নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ কূপ থেকে পানি উঠাবার কোন ব্যবস্থা পাচ্ছিনা। এ কথা শুনে বালিকাটি দৌড়ে এসে কূপের মধ্যে থু-থু নিক্ষেপ করল, সাথে সাথে পানি ফুলে উঠে পাড় পর্যন্ত গড়িয়ে যেতে লাগল। ঐ পানি দিয়ে যাজুলি (রাহঃ) সহ তার সঙ্গিগণ ওযু করে জোহরের নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে যাজুলি (রাহঃ) ঐ ঘরের দরজায় গিয়ে করাঘাত করে বললেন- হে বালিকা শুণ! যে মহান আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করে সুপথ দেখালেন ঐ আল্লাহ এবং তামাম আম্বিয়ায়ে কেরাম বিশেষ করে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওসীলা নিয়ে বলছি যার শাফায়াত তুমি কামনা কর, আমাকে বল কোন আমলের বদৌলতে তুমি এত বড় মর্যাদার অধিকারিনী হলে। মেয়েটি বলল- হে শায়খ! আপনি যদি এমন করে না বলতেন তাহলে আমি কিছুতই বলতাম না। শুণুন, আমার দৈনন্দিন আমল হচ্ছে মাত্র একটা দুরুদ শরীফ (দুরুদে বীর) পাঠ করা। ঐ দুরুদ শরীফ (দুরুদে বীর) পাঠের বরকতে আল্লাহ পাক আমাকে এমন মর্যাদা দান করেছেন। যাজুলি (রাহঃ) তখন মেয়েটির কাছ থেকে ঐ দুরুদ শরীফ (দুরুদে বীর) শিখে পাঠ করার অনুমতি নিলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ঐ মোবারক দুরুদ শরীফ এর নাম হয়ে গেল দুরুদে বীর। ঐ মোবারক দুরুদ শরীফ খানা হল-

اللهم صل على سيدنا مولنا محمد وعلى ال سيدنا محمد صلواة داأمة مقبولة تؤدبها عنا حقه العظيم

এসময় থেকে যাজুলি (রাহঃ) এর মনে প্রবল আগ্রহ দেখা দিল যে তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে পঠিত সকল দুরুদ শরীফ কিতাবাকারে একত্রিত করবেন। এরি পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ‘‘দালাইলুল খায়রাত’’ নামক প্রসিদ্ধ কিতাব সংকলন করেন, যা ওযীফা হিসেবে পৃথিবী জুড়ে আশেকে রাসুলগন পাঠ করতেছেন যুগ যুগ ধরে।

তথ্য সুত্রঃ

১. ক্বেরআন শরীফ

২. হাদীস শরীফ

৩. মাদারেজুন নবুয়্যাত

৪. খাসায়েসুল কুবরা

৫. দালায়লুল খায়রাত - আল্লামা হবিবুর রহমান

৬. বক্তব্য - ড. তাহিরুল কাদরী

৭. খাসায়েসুল আকবার