বিধর্মীদের উৎসবে যাওয়ার হুকুম
আমাদের সমাজে কিছু নামধারী মুসলিম আছেন যারা কুরআন শরীফের সূরা কাফিরুনের একটি আয়াত দিয়ে বলতে চান "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" (নাউযুবিল্লাহ)। তাই আমরা মুল আলোচনা করার পুর্বে সুরা কাফিরুন এর ফজিলত ও সরল অনুবাদ জেনে নিলে আলোচনা বুঝতে অনেকটা সহজ হবে ইনশা আল্লাহ।
আমাদের সমাজে কিছু নামধারী মুসলিম আছেন যারা কুরআন শরীফের সূরা কাফিরুনের একটি আয়াত দিয়ে বলতে চান "ধর্ম যার যার উৎসব সবার"
(নাউযুবিল্লাহ)। তাই আমরা মুল আলোচনা করার পুর্বে সুরা কাফিরুন এর ফজিলত ও সরল অনুবাদ জেনে নিলে আলোচনা বুঝতে অনেকটা সহজ হবে ইনশা আল্লাহ।
🔶️ সূরা কাফিরুন এর ফজিলত।
✍ ইবনে মাজাহ শরীফের হাদিসে এসেছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى رضى الله عنهما قَالَ - رَمَقْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم شَهْرًا فَكَانَ يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ بِ (يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ) وَ (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ).
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক মাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে পর্যবেক্ষণ করলাম। তিনি ফজরের (ফরযের) পূর্বের দুই রাকআতে সূরা ‘কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন’ ও কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করতেন।
✍ সুনানে আবু দাউদ, সুনানে দারেমী ও মুস্তাদরাকে হাকিমে এসেছে-
عَنْ فَرْوَةَ بْنِ نَوْفَلٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِنَوْفَلٍ - اقْرَأْ { قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ } ثُمَّ نَمْ عَلَى خَاتِمَتِهَا فَإِنَّهَا بَرَاءَةٌ مِنَ الشِّرْكِ " .
হযরত ফারওয়াহ ইবনু নাওফাল (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নাওফাল (রাঃ)-কে বলেন, তুমি “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন” সূরাটি পড়ে ঘুমাবে। কেননা তা শিরক হতে মুক্তকারী ।
✍ সুনানে আন-নাসায়ীতে এসেছে-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رضى الله قال - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا انْتَهَى إِلَى مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ قَرَأَ: {وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} (البقرة: ١٢٥) فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، فَقَرَأَ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ، وَقُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ، وَقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ثُمَّ عَادَ إِلَى الرُّكْنِ فَاسْتَلَمَهُ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّفَا.
হযরত জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাকামে ইবরাহীমে পৌঁছে তিলাওয়াত করলেন {وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} তারপর দু'রাক'আত সালাত আদায় করেন। তিনি সূরা ফাতিহা সূরা কাফিরুন ও সূরা ইখলাস পাঠ করেন। পরে আবার হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তাঁকে চুম্বন করেন। তারপর সাফা (পাহাড়ে)-র দিকে যান ।
🔶️ সূরা কাফিরুন এর সরল অনুবাদ।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ - قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ - لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ - وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ - وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ.
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
বলুন, হে কাফেরকূল, আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর। এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি। এবং আমি এবাদতকারী নই, যার এবাদত তোমরা কর। তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আর আমার দ্বীন আমার জন্যে।
✍ সংক্ষিপত আলোকপাত।
আমরা উক্ত সুরার ফজিলতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রতি দিন যখন রাতের পর দিন শুরু করতেন তখন তিনি ফজরের ফরজ নামাজ আদায় করার পুর্বে দুই রাকাত সুন্নত পড়তেন এবং প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন তেলাওয়াত করতেন। আবার যখন দিন শেষে রাতে ঘুমাতে যাবেন তখন এই সুরা কাফিরুন তেলাওয়াত করে পড়ার নির্দেশ দিলেন এবং বলে দিলেন এটা হলো শিরক হতে মুক্ত। সুতরাং কেউ যদি ঘুমানোর পুর্বে এই সুরা তেলাওয়াত করে ঘুমায় আর ঘুমের মধ্যে তার মরন হয়ে যায় তাহলে সে ব্যক্তি শিরক থেকে মুক্ত হয়ে মারা গেল। আবার পবিত্র হজ্জ একটি ফরজ ইবাদত সেই ইবাদতের জন্য পবিত্র কাবা শরীফের তাওয়াফ করে দুই রাকাত ওয়াজীব নামাজ আদায় করার সময়ও প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন তেলাওয়াত করতেন।
সুতরাং দিনের শুরুতে, রাতে ঘুমানোর সময় ও পবিত্র হজ্জের তাওয়াফ করার পরের ওয়াজীব নামাজে এই সুরা তেলাওয়াত করার ধারা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, এই সুরা তেলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করি। এই কথাটার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আল্লাহ বার বার বলে দিয়েছেন, যেমন লক্ষ্য করুন- সুরার দুই নম্বর আয়াত থেকে চার নম্বর আয়াত পর্যন্ত মোট চার বার এ কথাটি বলা হয়েছে, "আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর। এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি। এবং আমি এবাদতকারী নই, যার এবাদত তোমরা কর। তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি" এখানে আমরা যার ইবাদত করি যিনি একমাত্র ইবাদতের হকদার মহান আল্লাহ তায়ালা।
এই স্বীকৃতি বার বার দেওয়ার পর কাফিরদের উদ্দেশ্যে করে বলা হয় "তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আর আমার দ্বীন আমার জন্যে"। আর এই কথাটা পুঁজি করে একদল নামধারী মুসলমান স্লোগান দিচ্ছেন "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" তাই মুসলমান বিধর্মীদের যে কোন ধর্মীয় উৎসবে যেতে পারে। (নাউযুবিল্লাহ)
🔶️ মুল আয়াতের ব্যাখ্যা কি তাই।
"না", মুসলমান নামধারী নাস্তিক মুরদাতদের কথাটা সঠিক না, তা আমরা কুরআন শরীফের আরো কয়েকটি আয়াত ধারা পরিষ্কার বুঝতে পারি।
لَکُمۡ دِیۡنُکُمۡ وَلِیَ دِیۡنِ.
তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আর আমার দ্বীন আমার জন্যে।
এই কথাটার ব্যাখ্যায় ইবনে-কাসীর (র:) বলেন, এ বাক্যটি তেমনি যেমন অন্য আয়াতে আছে,
وَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل لِّي عَمَلِي وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ
আর তারা যদি আপনার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে আপনি বলবেন, আমার কাজের দায়িত্ব আমার এবং তোমাদের কাজের দায়িত্ব তোমাদের। (সূরা ইউনুস ৪১)
✍ সুরা কাসাসের ৫৫ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَ اِذَا سَمِعُوا اللَّغۡوَ اَعۡرَضُوۡا عَنۡہُ وَ قَالُوۡا لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَ لَکُمۡ اَعۡمَالُکُمۡ ۫ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ ۫ لَا نَبۡتَغِی الۡجٰہِلِیۡنَ.
তারা যখন বাজে কথা শোনে তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় আর বলে, আমাদের জন্য আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ। তোমাদেরকে সালাম। আমরা মূর্খদের (সঙ্গ) চাই না।
✍ এর সারমর্ম এই যে, ইবনে-কাসীর دين শব্দকে দ্বীনী ক্রিয়াকর্মের অর্থে নিয়েছেন। যার অর্থ, প্রত্যেককে নিজ নিজ কর্মের প্রতিদান ও শাস্তি ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ আমার দ্বীন আলাদা এবং তোমাদের দ্বীন আলাদা। আমি তোমাদের মাবুদদের পূজা-উপাসনা-বন্দেগী করিনা এবং তোমরাও আমার মাবুদের পূজা-উপাসনা করো না। আমি তোমাদের মাবুদের বন্দেগী করতে পারি না এবং তোমরা আমার মাবুদের বন্দেগী করতে প্রস্তুত নও। তাই আমার ও তোমাদের পথ কখনো এক হতে পারে না।
বর্তমান কালের কোন কোন জ্ঞানপাপী মনে করে থাকে যে, এখানে কাফেরদেরকে তাদের দ্বীনের উপর থাকার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তারা এটাকে ইসলামের উদারনীতির প্রমাণ হিসেবে পেশ করে থাকেন। নিঃসন্দেহে ইসলাম উদার। ইসলাম কাউকে অযথা হত্যা বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে অনুমতি দেয় না। কিন্তু তাই বলে তাদেরকে কুফরী থেকে মুক্তি দিতে তাদের মধ্যে দাওয়াত ও দ্বীনের প্রচার-প্রসার ঘটানো থেকে বিরত থাকতে বলেনি। ইসলাম চায় প্রত্যেকটি কাফের ও মুশরিক ইসলামের ছায়াতলে এসে শান্তির বার্তা গ্ৰহণ করুক। আর এ জন্য ইসলাম প্রজ্ঞা, উত্তম উপদেশবাণী, উত্তম পদ্ধতিতে তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর পথে আহ্বান করাকে প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করণীয় বিষয় হিসেবে ঘোষণা করেছে।
✍ সূরা আন-নাহলের ১২৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ وَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ.
আপনি মানুষকে দা’ওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায়। নিশ্চয় আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালভাবেই জানেন।
মূলত: এ সমস্ত জ্ঞানপাপীরা এ বিষয়টিকেই সহ্য করতে চায় না। তারা এখানে আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নামক কুফৱী মতবাদকে জায়েয প্রমাণ করা। এটা নিঃসন্দেহে ঈমান আনার পরে কুফরী করার শামিল, যা মূলত কাফেরদের প্রতি উদারনীতি নয় বরং তারা কাফের থাকা অবস্থায় চিরকালের জন্য তাদের ব্যাপারে দায়মুক্তি, সম্পর্কহীনতা ও অসন্তোষের ঘোষণাবাণী।
আর এ সূরায় কাফেরদের দ্বীনের কোন প্রকার স্বীকৃতিও দেয়া হয়নি। মূলত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যারা ঈমান এনেছে তারা দ্বীনের ব্যাপারে কখনো তাদের সাথে সমঝোতা করবে না- এ ব্যাপারে তাদেরকে সর্বশেষ ও চূড়ান্তভাবে নিরাশ করে দেয়া, আর তাদের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণাই এ সূরার উদ্দেশ্য। এ সূরার পরে নাযিল হওয়া কয়েকটি মক্কী সূরাতে কাফেরদের সাথে এ দায়মুক্তি, সম্পর্কহীনতা ও অসন্তোষ প্রকাশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
✍ সূরা ইউনুসের ১০৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
قُلۡ یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ شَکٍّ مِّنۡ دِیۡنِیۡ فَلَاۤ اَعۡبُدُ الَّذِیۡنَ تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ لٰکِنۡ اَعۡبُدُ اللّٰہَ الَّذِیۡ یَتَوَفّٰىکُمۡ ۚۖ وَ اُمِرۡتُ اَنۡ اَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ.
হে মানুষ! যদি আমার দ্বীন (ইসলাম) সম্বন্ধে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে তাহলে (জেনে রাখ) তোমরা আল্লাহকে ছাড়া যাদের এবাদত করো আমি তাদের এবাদত করব না। আমি এবাদত করি আল্লাহর, যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান। আমাকে তো মুমিন হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
✍ সূরা আশ-শুআরার ২১৬নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
فَاِنۡ عَصَوۡکَ فَقُلۡ اِنِّیۡ بَرِیۡٓءٌ مِّمَّا تَعۡمَلُوۡنَ.
হে নবী! যদি এরা এখন আপনার কথা না মানে তা হলে বলে দিন, তোমরা যা কিছু করেছো তা থেকে আমি দায়মুক্ত।
✍ সূরা সাবার ২৫ ও ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন -
قُلۡ لَّا تُسْئَلُوْنَ عَمَّاۤ اَجۡرَمۡنَا وَلَا نُسۡئَلُ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ - قُلۡ یَجۡمَعُ بَیۡنَنَا رَبُّنَا ثُمَّ یَفۡتَحُ بَیۡنَنَا بِالۡحَقِّ ؕ وَ ہُوَ الۡفَتَّاحُ الۡعَلِیۡمُ.
এদেরকে বলুন, আমাদের ত্রুটির জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না এবং তোমরা যা কিছু করে যাচ্ছো সে জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে না। বলুন, আমাদের রব একই সময় আমাদের ও তোমাদের একত্র করবেন এবং আমাদের মধ্যে ঠিকমতো ফায়সালা করবেন। তিনিই বড় মীমাংসাকারী, মহাজ্ঞানী।
✍ সূরা আয-যুমারের ৩৯ ও ৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
قُلۡ یٰقَوۡمِ اعۡمَلُوۡا عَلٰی مَکَانَتِکُمۡ اِنِّیۡ عَامِلٌ ۚ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ. مَنۡ یَّاۡتِیۡہِ عَذَابٌ یُّخۡزِیۡہِ وَ یَحِلُّ عَلَیۡہِ عَذَابٌ مُّقِیۡمٌ.
এদেরকে বলুন হে আমার জাতির লোকেরা তোমরা নিজেদের জায়গায় কাজ করে যাও। আমি আমার কাজ করে যেতে থাকবো। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে কার ওপর আসছে লাঞ্ছনাকর আযাব এবং কে এমন শাস্তি লাভ করছে যা অটল।
🔶️ আবার মদীনা তাইয়েবার সমস্ত মুসলিমকেও এই একই শিক্ষা দেয়া হয়। তাদেরকে বলা হয়েছে।
✍ সূরা আল-মুমতাহিনার ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
قَدۡ کَانَتۡ لَکُمۡ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ فِیۡۤ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ الَّذِیۡنَ مَعَہٗ ۚ اِذۡ قَالُوۡا لِقَوۡمِہِمۡ اِنَّا بُرَءٰٓؤُا مِنۡکُمۡ وَ مِمَّا تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ ۫ کَفَرۡنَا بِکُمۡ وَ بَدَا بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃُ وَ الۡبَغۡضَآءُ اَبَدًا حَتّٰی تُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰہِ وَحۡدَہٗۤ اِلَّا قَوۡلَ اِبۡرٰہِیۡمَ لِاَبِیۡہِ لَاَسۡتَغۡفِرَنَّ لَکَ وَ مَاۤ اَمۡلِکُ لَکَ مِنَ اللّٰہِ مِنۡ شَیۡءٍ ؕ رَبَّنَا عَلَیۡکَ تَوَکَّلۡنَا وَ اِلَیۡکَ اَنَبۡنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ.
তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সঙ্গীদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সমপ্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত করো তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম এবং আমাদের ও তোমাদের মাঝে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হল, যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে ইবরাহীম তার বাবাকে বলেছিল, “আমি তোমার জন্য অবশ্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব। যদিও আল্লাহর সামনে তোমার জন্য আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই। (ইবরাহীম ও তার সঙ্গীরা বলেছিল) হে আমাদের প্রভু! আমরা তোমার ওপরই ভরসা করেছি, তোমার দিকেই মুখ ফিরিয়েছি এবং তোমার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন।
✍ কুরআন মজীদের একের পর এক এসব সুস্পষ্ট বক্তব্যের পর তোমরা তোমাদের ধর্ম মেনে চলো এবং আমাকে আমার ধর্ম মেনে চলতে দাও-“লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়াদীন” এর এ ধরনের কোন অর্থের অবকাশই থাকে না। বরং সূরা আয-যুমার এ যে কথা বলা হয়েছে, একে ঠিক সেই পর্যায়ে রাখা যায় যেভাবে আল্লাহ নিজেই বলেছেন।
✍ সুরা যুমারের ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
قُلِ اللّٰہَ اَعۡبُدُ مُخۡلِصًا لَّہٗ دِیۡنِیۡ
হে নবী বলুন, আমি আমার দ্বীনকে কেবল আল্লাহর জন্য নিবেদিত করে তাঁর ইবাদত করি।
✍ সুতরাং এটাই এ আয়াতের মূল ভাষ্য যে, এখানে কাফেরদের সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এটাও লক্ষণীয় যে, পবিত্র কুরআনে একথাও আছে, কাফেররা সন্ধি করতে চাইলে তোমরাও সন্ধি কর।
✍ সূরা আল-আনফালের ৬১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَاِنۡ جَنَحُوۡا لِلسَّلۡمِ فَاجۡنَحۡ لَہَا وَ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ ؕ اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ.
আর তারা যদি সন্ধির দিকে ঝোঁকে তাহলে তুমিও তার দিকে ঝুঁকবে, আর আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবে। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।
তাছাড়া মদীনায় হিজরত করার পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- তার ও ইয়াহূদীদের সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। তাই সম্পর্কচ্যুতির অর্থ এ নয় যে, তাদের সাথে প্রয়োজনে সন্ধিচুক্তি করা যাবে না। মূলত সন্ধির বৈধতা ও অবৈধতার আসল কারণ হচ্ছে স্থান-কাল-পাত্র এবং সন্ধির শর্তাবলি। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফয়সালা দিতে গিয়ে বলেছেন-
✍ আবু দাউদ, তিরমিজী ও ইবনে মাজায় এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ - قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الصُّلْحُ جَائِزٌ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ . زَادَ أَحْمَدُ إِلاَّ صُلْحًا أَحَلَّ حَرَامًا أَوْ حَرَّمَ حَلاَلاً . وَزَادَ سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ .
হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- মুসলিম সমাজে পরস্পরের মধ্যে সন্ধি স্থাপন বৈধ। ইমাম আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে, তবে এমন সন্ধি বৈধ নয় যা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করে।
🔶️ দ্বীন ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম।
✍ সূরা আল-ইমরানের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰہِ الۡاِسۡلَامُ.
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন ইসলাম।
✍ উক্ত সূরার ৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡہُ ۚ وَ ہُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ.
আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
🔶️ বিধর্মীদের উৎসবে না যাওয়া হলো মুমিনেরর লক্ষণ।
✍ সূরা ফুরকানের ৭২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَالَّذِیۡنَ لَا یَشۡہَدُوۡنَ الزُّوۡرَ ۙ وَ اِذَا مَرُّوۡا بِاللَّغۡوِ مَرُّوۡا کِرَامًا.
আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়।
✍ মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা জেনে শুনে আজে-বাজে কথা ও কাজ দেখতে বা শুনতে অথবা তাতে অংশ গ্রহণ করে না। আর যদি কখনো তাদের পথে এমন কোন জিনিস এসে যায়, তাহলে তার প্রতি একটা উড়ো নজর না দিয়েও তারা এভাবে সে জায়গা অতিক্রম করে যেমন একজন অত্যন্ত সুরুচিসম্পন্ন ব্যাক্তি কোন ময়লার স্তুপ অতিক্রম করে চলে যায়। (ফাতহুল কাদীর ও কুরতুবী)
🔶️ বিধর্মীদের উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো।
✍ কাউকে শুভেচ্ছা বা শুভকামনা জানানো ইসলামিক পরিভাষায় দোয়ার শামিল। আর বিধর্মীদের জন্য হেদায়ত কামনা ছাড়া আর কোন দোয়া করা বৈধ নয়।
সূরা তওবার ১১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
مَا کَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ یَّسۡتَغۡفِرُوۡا لِلۡمُشۡرِکِیۡنَ وَ لَوۡ کَانُوۡۤا اُولِیۡ قُرۡبٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُمۡ اَنَّہُمۡ اَصۡحٰبُ الۡجَحِیۡمِ.
নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী।
✍ সূরা তওবার ৮০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
اِسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ اَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ ؕ اِنۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ سَبۡعِیۡنَ مَرَّۃً فَلَنۡ یَّغۡفِرَ اللّٰہُ لَہُمۡ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ.
তুমি তাদের জন্য ক্ষমা চাও, অথবা তাদের জন্য ক্ষমা না চাও। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা চাও, তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে হিদায়াত দেন না।
🔶️ বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে সাহায্য করা।
✍ সূরা মায়দার ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَتَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَالتَّقۡوٰی - وَلَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَالۡعُدۡوَانِ - وَاتَّقُوا اللّٰہَ - اِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ.
সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।
🔶️ বিধর্মীদের অনুষ্ঠানের স্থানে যাওয়াও ঠিক নয়।
✍ আবু দাউদ শরীফের হাদিসে এসেছে-
عن ثَابِتُ بْنُ الضَّحَّاكِ، قَالَ : نَذَرَ رَجُلٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَنْحَرَ إِبِلاً بِبُوَانَةَ، فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ : إِنِّي نَذَرْتُ أَنْ أَنْحَرَ إِبِلاً بِبُوَانَةَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : " هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيَّةِ يُعْبَدُ " . قَالُوا : لاَ . قَالَ : " هَلْ كَانَ فِيهَا عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ " . قَالُوا : لاَ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : " أَوْفِ بِنَذْرِكَ، فَإِنَّهُ لاَ وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلاَ فِيمَا لاَ يَمْلِكُ ابْنُ آدَمَ " .
হযরত সাবিত ইবনুদ দাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে এক ব্যক্তি মানত করে যে, সে বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট যাবাহ করবে। সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে বললো, আমি বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট কুরবানি করার মানত করেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন- সেখানে কি জাহেলী যুগের কোন মূর্তি রয়েছে? লোকেরা বলল, না। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ সেখানে কি তাদের কোন মেলা বসতো? লোকেরা বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন- তোমার মানত পূর্ণ করতে পারো। কেননা আল্লাহ্র নাফরমানীমূলক কাজের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করা জায়িয নয় এবং আদম সন্তান যে জিনিসের মালিক নয় তারও কোন মানত নেই।
🔶️ আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করা।
✍ সূরা মুজাদালার ২২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
لَا تَجِدُ قَوۡمًا یُّؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ یُوَآدُّوۡنَ مَنۡ حَآدَّ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَ لَوۡ کَانُوۡۤا اٰبَآءَہُمۡ اَوۡ اَبۡنَآءَہُمۡ اَوۡ اِخۡوَانَہُمۡ اَوۡ عَشِیۡرَتَہُمۡ ؕ اُولٰٓئِکَ کَتَبَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمُ الۡاِیۡمَانَ وَ اَیَّدَہُمۡ بِرُوۡحٍ مِّنۡہُ ؕ وَ یُدۡخِلُہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ ؕ اُولٰٓئِکَ حِزۡبُ اللّٰہِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ حِزۡبَ اللّٰہِ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ.
তুমি পাবে না এমন জাতিকে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে, বন্ধুত্ব করে তার সাথে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধীতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এরাই, যাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে যার নিচে দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম।
🔶️ বিধর্মীদের অনুসরনে মুসলিমেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
✍ সূরা আল-ইমরানের ১৪৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تُطِیۡعُوا الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یَرُدُّوۡکُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ فَتَنۡقَلِبُوۡا خٰسِرِیۡنَ.
হে মুমিনগণ, যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তারা তোমাদেরকে তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরে যাবে।
🔶️ বিধর্মীদের বন্ধু বানাতে নিষেধ।
✍ সূরা নিসার ৮৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
وَدُّوۡا لَوۡ تَکۡفُرُوۡنَ کَمَا کَفَرُوۡا فَتَکُوۡنُوۡنَ سَوَآءً فَلَا تَتَّخِذُوۡا مِنۡہُمۡ اَوۡلِیَآءَ حَتّٰی یُہَاجِرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَخُذُوۡہُمۡ وَ اقۡتُلُوۡہُمۡ حَیۡثُ وَجَدۡتُّمُوۡہُمۡ ۪ وَ لَا تَتَّخِذُوۡا مِنۡہُمۡ وَلِیًّا وَّ لَا نَصِیۡرًا.
তারা কামনা করে, যদি তোমরা কুফরী করতে যেভাবে তারা কুফরী করেছে। অতঃপর তোমরা সমান হয়ে যেতে। সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে কাউকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। অতএব তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং তাদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর। আর তাদের কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না এবং না সাহায্যকারীরূপে।
🔶️ বিধর্মীদের দলভুক্ত হবে।
✍ আবু দাউদ শরীফের হাদিসে এসেছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ - قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।
✍ তিরমিজী শরীফের হাদিসে এসেছে-
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رضى الله عنه قال - قال رسول الله صلى الله عليه وسلم - لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لاَ تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ وَلاَ بِالنَّصَارَى فَإِنَّ تَسْلِيمَ الْيَهُودِ الإِشَارَةُ بِالأَصَابِعِ وَتَسْلِيمَ النَّصَارَى الإِشَارَةُ بِالأَكُفِّ.
হযরত আমর ইবনে শু‘আইব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃد- বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী-নাসারাদের অনুকরণ করো না। কেননা ইয়াহূদীগণ আঙ্গুলের ইশারায় এবং নাসারাগণ হাতের ইশারায় সালাম দেয়।
🔶️ ইয়াহূদী ও নাসারার অনুসরণ করা।
✍ বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضى الله عنه قال - قال رسول الله صلى الله عليه وسلم - لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ - حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ - قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى؟ قَالَ فَمَنْ؟
হযরত আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি দবের গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! এরা কি ইয়াহূদী ও নাসারা? তিনি বললেন- আর কারা?
✍অতএব, আমরা কুরআন শরীফ ও হাদিস শরীফের মাধ্যমে পরিষ্কার হলাম যে "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" এই কথা ইসলাম সমর্থন করে না। তাই বিধর্মীদের যে কোন উৎসবে যাওয়াত অনেক দুরের কথা, এরকম কথা বলাই যাবে না, এবং যারা বলে তাদেরকেও সমর্থন করা যাবে না। নিজের সামর্থ অনুযায়ী এর প্রতিবাদ করতে হবে। তবে বিধর্মীদের সাথে সামাজিক লেনদেন, উঠাবসা করা যাবে। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাদের কোন ধরনের অন্যায় কষ্ট দেওয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
-মুহাম্মাদ আকতার আল-হুসাইন।