আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী (বড় সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী) এর সংক্ষিপ্ত জীবনি
পিতৃ-মাতৃকুলে বেলায়েতের উত্তরাধিকার বহনকারী মহান মনীষী আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী (বড় সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী) ১৯৪৭ সালে জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলতলী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলীয়ে কামিল, মুজাদ্দিদে যামান আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী (রহঃ) এবং মাতা মহীয়সী নারী যুগের রাবেয়া বসরি, খাদিজা খাতুন বিনতে কুতুবুল আকতাব আবু ইউসুফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী বুন্দাশিলী রহ.। আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী (বড় সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী) হযরত শাহজালাল মুজাররদে ইয়ামনী (রহঃ) এর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ কামাল রহ. এর বংশের অধস্তন পুরুষ শাহ আ'লা বখশ রহ. এর বংশধর। শাহ আ'লা বখশ রহ. পর্যন্ত তার বংশ পরস্পরা নিম্নরুপ ।
🌱জন্ম ও বংশ পরিচয়:🌱
পিতৃ-মাতৃকুলে বেলায়েতের উত্তরাধিকার বহনকারী মহান মনীষী আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী (বড় সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী) ১৯৪৭ সালে জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলতলী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলীয়ে কামিল, মুজাদ্দিদে যামান আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী (রহঃ) এবং মাতা মহীয়সী নারী যুগের রাবেয়া বসরি, খাদিজা খাতুন বিনতে কুতুবুল আকতাব আবু ইউসুফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী বুন্দাশিলী রহ.।
আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী (বড় সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী) হযরত শাহজালাল মুজাররদে ইয়ামনী (রহঃ) এর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ কামাল রহ. এর বংশের অধস্তন পুরুষ শাহ আ'লা বখশ রহ. এর বংশধর। শাহ আ'লা বখশ রহ. পর্যন্ত তার বংশ পরস্পরা নিম্নরুপ ।
*শাহ মোহাম্মদ আ'লা বখশ রহ. > শাহ মোহাম্মদ এলাহী বখশ রহ. > শাহ মোহাম্মদ সাদেক রহ. > শাহ মোহাম্মদ দানেশ রহ. > শাহ মোহাম্মদ হিরণ রহ. > মুফতি আব্দুল মজীদ চৌধুরী রহ. > আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী রহ. > আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (দাঃবাঃ)।
☘️শিক্ষা জীবন:🍀
প্রাথমিক শিক্ষা— প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়ীতেই বুযুর্গ পিতা ও আবেদা মাতার কাছে।
পরবর্তিতে
দাখিল— ইছামতি আলীয়া মাদ্রাসা হতে
আলিম— সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা হতে
ফাযিল— মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকা হতে
কামিল (হাদিস) — (১৯৬৮) মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকা হতে।
কামিল (আদিব)— মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকা হতে।
ডিপ্লোমা ইন উর্দু — মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকা হতে।
বিএ ডিগ্রী— ঢাকা বুরহান উদ্দীন কলেজ হতে।
প্রাথমিক হতে কামিল শ্রেনী পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে কৃতিত্বের সাথে (১ম বিভাগ+মেধা তালিকায় স্থান অর্জন করে) প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করেন।
এছাড়া সে যুগের শ্রেষ্ট ফকিহ, মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকার হেড মাওলানা, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেরপ্রথম খতিব আওলাদে রাসুল সা. মুফতি সাইয়্যিদ আমীমুল ইহসান মোজাদ্দেদী ওয়া বারাকাতী রহঃ এর সংস্পর্শ থেকে হাদীস, হানাফী ফিকহ সহ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জ্ঞানভান্ডারের ইজাযত লাভ করেন ।
🌱পরিবারিক জীবন🌱
৮ ভাই ৩ বোনের মধ্যে তিনি দ্বীতিয় ১ম ভাই শিশু কালেই ইন্তিকাল করেন।
আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী (বড় সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী) ৭০ এর দশকে মৌলভীবাজার জেলাধীন রাজনগরস্থ কামারচক গ্রামের প্রখ্যাত ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মান্যবর জনাব দেওয়ান আব্দুস সাবুর সাহেবের দ্বীতিয় মেয়ে দেওয়ান সরওত হাবীবুন্নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন মেয়ে ও চার ছেলে মোট সাত সন্তানের জনক তিনি। মেয়ে তিনজন ছেলেদের বড় এবং সবাই বিবাহীত, ছেলেদের মধ্যে ৩ জন বিবাহীত ।
🌱কর্ম জীবন🌱
১: ইছামতি দারুল হাদিসে মুহাদ্দিস পদে দ্বায়ীত্ব পালন করেন ।
২: সৎপুর দারুল হাদিসে মুহাদ্দিস পদে যোগদান করে পরবর্তিতে এক বছরের অধিককাল প্রিন্সিপাল হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।
৩:.বর্তমানে তিনি ফুলতলী মাদ্রাসায় কামিল জামাতের ছাত্রদের প্রায় প্রতিমাসে অবৈতনিকভাবে হাদীসে নববীর দরস প্রদান করেন।
এছাড়া প্রায় প্রতিমাসে নিজস্ব উদ্যোগে দেশ বিদেশে দরসে হাদীসের আয়োজন করে থাকেন। এতে দেশ বিদেশের অসংখ্য আলিম-উলামা অংশ গ্রহন করেন।
আরোও যে সব দ্বায়ীত্ব পালন করেন:
১: জেনারেল সেক্রেটারী দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট।
২: এডভাইজার বোর্ড মেম্বার মুসলিম হ্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ।
৩: ব্যবস্থাপক অন্ধ আতুর ও গরীব বিধবা সাহায্য প্রকল্প ।
৪: মোতাওয়াল্লী লতিফিয়া এতিমখানা ফুলতলী ।
৫: সভাপতি ইয়াকুবিয়া হিফজুল কুরআন বোর্ড ।
🌱ভাই বোনদের নাম🌱
কুতুবুল আকতাব বদরপুরী রহ. তৃতীয়া সাহেবজাদী মুহতারামা খাদিজা (র.) ঔরষে পাঁচজন সাহেবজাদা ও তিনজন সাহেবজাদী জন্ম গ্রহন করেন। (১ম সাহেবজাদা শিশুকালেই মৃত্যু বরন করেন)।
অন্যান্যরা হলেন:
** আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (বড় সাহেব কিবলাহ) ।
** আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (মেঝ সাহেবজাদা)
** মোছাম্মত করিমুন্নেসা চৌধুরী (বড় সাহেবজাদী)
** আল্লামা শিহাবুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (৩য় সাহেবজাদা)
** মোছাম্মত মাহতাবুন্নেসা চৌধুরী (মেঝ সাহেবজাদী)
** মোছাম্মত আফতাবুন্নেসা চৌধুরী (ছোট সাহেবজাদী)
** আল্লামা গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (মুফতি সাহেব)
🔹মুহতারামা নেহারুন্নেছার (র.) ঔরষে তিনজন সাহেবজাদা জন্ম গ্রহন করেন।
** আল্লামা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (৫ম সাহেবজাদা)
** আল্লামা হাফিজ ফখরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (৬ষ্ট সাহেবজাদা)
** আল্লামা হুসামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (ছোট সাহেবজাদা)
🌱ভ্রমন ও যিয়ারত🌱
سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ
[العنكبوت: ٢٠].
তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন।
বড় সাহেব কিবলাহ (দাঃবাঃ) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ এবং রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাত পালনার্থে সফর বা ভ্রমন করেছেন।
১৯৬৫ সালে আলীম ক্লাসে অধ্যায়নকালে তার ওয়ালীদ মুহতারাম আল্লামা সাহেব কিবলাহ (রহ.) সাথে প্রথম হজ্জ করেন।
গ্রেট বৃটেন ((UK), যুক্তরাষ্ট্র (USA), সুইডেন, তুরস্ক, পাকিস্তান, ভারত সফর করেছেন।
এ সকল সফর মুলত দাওয়াতী সফর। বিশেষতঃ গ্রেট বৃটেন (খানেকা, দরসে হাদীস, তজক্বিয়ায়ে নফস প্রশিক্ষন করে থাকেন)।
তাছাড়া ভারতে বেশ কয়েকবার ওলী আউলিয়াদের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করেছেন। ভারতে যাদের মাজার যিয়ারত করেছেন তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
** হযরত শাহ ইয়াকুব বদরপুরী বুন্দাশিলী (রহ.)।
** হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমিরী (রহ.)।
** হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী সেরহিন্দী (রহ.)।
** হযরত খাজা নিজামুদ্দীন (রহ.)।
** হযরত বখতিয়ার খাকী (রহ.)। সহ আরো অনেক।
ওলী আউলিয়াদের মাযার যিয়ারতের প্রতি তার হৃদয়ের টান খুব বেশি। তাই যখনই সুযোগ পান বিভিন্ন মক্ববুল ওলীর মাযার যিয়ারতে যান। বিশেষ করে যে কোন সফরের আগে বা সফর শেষে সুলতানে সিলেট হযরত শাহজালাল (রহ.) এর যিয়ারত করে থাকেন। তাছাড়া হযরত শাহপরান (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার অনেকের যিয়ারত ও করে থাকেন।
🔹বড় সাহেব কিবলার জীবনে ওয়ালিদ মুহতারাম সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর প্রভাব:🔹
আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী (বড় সাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী) এর বয়স যখন সাত বছর তখন থেকেই তার ওয়ালিদ মুহতারাম সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর বিশাল প্রভাব তার জীবনে দেখা যায়। বড় সাহেব কিবলাহ তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন " আমি যখন ৭ বছরের শিশু তখন একদিন ইছামতি টাইটেল মাদ্রাসার পশ্চিমের খালে আমাদের নৌকা ডুবে যায়!! আমি চিৎকার দিয়ে ডাকলাম 'বাবা' !! কয়েকবার দেখলাম আমার বাবা পিছনের গলুই কাঁধে নিয়ে সাঁতার কাটছেন। আমার ডাক শুনে তিনি ইচ্ছে করলে আমাকে নিয়ে তীরে উঠতে পারতেন। কিন্তু শুধু আমাকে রক্ষা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার মত আরো তিনটি অসহায় শিশুকে রক্ষা করলেন। আমি আমার কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্যে দেখলাম তিনি কত অসহায় মানুষের জীবনতরী উদ্ধার করার জন্য বারবার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। মানুষ তথা মানবতার জন্য তার ভালবাসা ছিল অকৃত্রিম। মানুষকে তিনি আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবেসেছেন। বুজুর্গ বাবার জীবনাচার বড় সাহেব কিবলার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলার কারনেই আজ তাকে খুঁজে পাওয়া যায় অসহায় মানবতার পাশে, কোরআনের খেদমতে, হাদীস শরীফের দরসে, জ্ঞান চর্চা, তাযকিয়ায়ে নফস, লিখনী সহ বহুমুখি খেদমতে। মুজাদ্দীদে যামান আল্লামা সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সাক্ষী তিনি। সৈয়দপুরের রক্তমাখা স্মৃতি, জেল জীবন সহ ভিবিন্ন ইসলামী আন্দোলন তাকে জীবনের পাঠ নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। বিপদে আল্লাহর উপর বিশ্বাস এবং অবিচল থাকার শিক্ষা দিয়েছে।
🔹মহিয়সী জননীর প্রভাব:🔹
তার মাতা এ যুগের রাবেয়া বসরি ছিলেন, কুতুবুল আকতাব হযরত আবু ইউসুফ শাহ ইয়াকুব বদরপুরী রহ. এর আদরের কন্যা এবং যুগের মুজাদ্দীদ সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর জীবন সঙ্গিনী। বাবা এবং স্বামীর জীবনের প্রভাব তার মধ্যে ছিল। গুলিস্তা, বুস্তা, দালাঈলুল খায়রাত, হিযবুল বাহার সবসময় পাঠ করতেন, গরীব মিসকীনদের অকাতরে দান করতেন। (শেষ জীবনে তিনি দুনিয়া বিরাগী জীবনযাপন করেন)! মা জননীর শিক্ষার প্রভাব বড় সাহেব কিবলার জীবনে দেখতে পাওয়া যায়। এ মহিয়সী নারী তার সন্তানের কচি মনে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এবং ওলী আল্লাহদের ভালবাসা গেঁথে দিয়েছিলেন। তার খোদাভীতি, দুনিয়া বিরাগ, গরীব দুস্থজনের প্রতি মমত্ববোধ সন্তানের উপর প্রচ্ছন্ন প্রভাব রেখেছে। বড় সাহেবের লিখনিতেও এ কথা ফুটে উঠে। কবিতার ছন্দে তিনি লিখেন:
শৈশবকালে
জননীর কোলে
শুনেছিনু তব নাম
নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
বড় সাহেব কিবলাহের জীবনে তার মহিয়সী মায়ের প্রভাব কতো গভীর তা তার একটি আবেগপূর্ণ লিখায় ফুটে উঠে:
বড় সাহেব কিবলাহ বলেন: "মা আমার ! যখন আমি বালক ছিলাম সন্ধ্যাবেলা ভাই-বোনদের নিয়ে তোমাকে ঘিরে গোল হয়ে বসতাম। তুমি মধুর কন্ঠে গুলিস্তা, বুস্তা, দেওয়ানে হাফিজ, পন্দনামার কবিতাগুলি আবৃতি করে শুনাতে। পয়গাম্বরগণের কাহিণী, ওলী আউলিয়ার কাহিণী শুনার অধির আগ্রহ নিয়ে আমরা তোমার কাছে ঘেঁসে বসার জন্য প্রতিযোগীতা করতাম। এখন তুমি মাটির বিছানাকে পছন্দ কর। যে সুন্দর হাত দু'খানা তুলে তুমি আমাদের নিয়ে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করতে, আজ দু'খানা হাত শুকিয়ে পল্লবহীন শুষ্কবৃক্ষ শাখার মত হয়ে গেছে। তোমার চেহরাখানা দেখলে মনে হয় তুমি সব হারিয়ে কোন অমুল্য রতন পেয়েছ!!
মা! এখন আমি যেখানে যত অসহায় মানুষ দেখি তাদের মলিন চেহারায় তোমারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তাদের অশ্রুভেজা কাতর নয়নের দিকে যখনই তাকাই তখনই মনে হয় তুমি আমার দিকে চেয়ে আছ। জীর্ণশীর্ণ রিক্ত হস্ত মানুষগুলির শুকিয়ে যাওয়া হাতগুলিকে তোমার হাত মনে করে তাদের দোয়া লওয়ার চেষ্টা করি"।
সত্যিই! এতিম অসহায়দের সাথের আচরন দেখলে বড় সাব কিবলার এই অনুভুতি বাস্তবে দেখা যায় ।
🏝মুহতারাম ওয়ালিদ সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর নানাবিধ খেদমতে তার অংশগ্রহণ🏝
সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর নানাবিধ খেদমতে তার রয়েছে সরাসরি অংশগ্রহণ।
১: ইলমে ক্বিরাত: সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর কিরাতের খেদমতের প্রাতিষ্টানিকরূপ দান করেন বড় সাহেব কিবলাহ।
২: সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. কারাগারে বসে মুনতাখাবুস সিয়র, নালায়ে কলন্দর, আত-তানভীর আলাত তাফসীর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি পান্ডুলিপীর সাথে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপ মিলিয়ে কাতিবের মাধ্যমে ছাপার কাজ তরান্বিত করেন তিনি।
৩: সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর প্রতিষ্ঠিত ইয়াতিমখানার শুরু থেকে (১৯৭২ সাল থেকে) তত্বাবধান করেন বড় সাহেব কিবলাহ ফুলতলী । তার পরিচালনা ও প্ররিশ্রমের কারনে আজ প্রায় দেড় হাজারের অধিক এতিমের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিনত হয়েছে।
৪: মাসিক খানেকা: তরীকতের তা'লিমের জন্য তরিকতপন্থীদের জন্য সাহেব কিবলাহ চালু করেন 'মাসিক খানেকা' । সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর অনুমতি নিয়ে প্রতিমাসের প্রথম শুক্রবারে তিনদিনের এই আয়োজন আজো যথাযথভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি।
🔹দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট🔹
১৯৫০ সালে ওয়ালিদ মুহতারাম হযরত সাহেব কিবলাহ রহ. এর মাধ্যমে শুরু হয়ে এবং বড় সাহেব কিবলাহ আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এ মকবুল খেদমতটি বিশ্বের উল্লেখযোগ্য একটি বিশুদ্ধ কিরাত শিক্ষাকেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে (২০১৭ ইংরেজি) ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ভারত মহাদেশ সহ আড়াই হাজারের ও অধিক শাখার মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক ছাত্র/ছাত্রি বিশুদ্ধ কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করছে। দারুল কিরাতের ক্রমাগত অগ্রগতির কারন হলো, এর অনুমোধন এসেছে সরাসরি মদিনা তাইয়েব্যা হতে!! অনেকেই জানেন সাহেব কিবলাহ রহ. স্বপ্নযোগে নবী সা. এর ইশারা পেয়ে ভারতের আদম খাকী র. এর মাযার সংলগ্ন মসজিদে প্রথম দারুল কিরাতের খেদমত শুরু করেন। (উল্লেখ্য বিশিষ্ট বুজুর্গ হযরত আব্দুন নুর গড়কাপনী রহ. অবশ্য সাহেব কিবলাহকে কিরাত শিক্ষাদানে বাধ্য করেন)। বড় সাহেব কিবলাহ নিজ থেকে দারুল ক্বিরাতের স্তর বিন্যাস, ক্বারী সাহেব নিয়োগ, কেন্দ্র অনুমোদন, পরিদর্শন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ সহ সবকিছু তদারকি করেন। দারুল ক্বিরাতের সকল পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্থবায়ন বড় সাহেব খুবই গুরুত্বের সাথে করে থাকেন। তার কোরআন শরীফের প্রতি অগাধ প্রেম, ইখলাস, নীতিনিষ্টতা, দক্ষতা, কর্মস্পৃহা, অবিরত সময়দান, সর্বোপরি মদিনাওয়ালার মহব্বতই আজ দারুল কিরাত মজিদিয়া ট্রাষ্ট নামক প্রতিষ্টানটি এতো উচু মর্গে পৌছতে পেরেছে।
❣️আশ্চর্যের ব্যপার হলো বিগত অর্ধশতক ধরে এতো কিছু করছেন কোন ধরনের বেতন ভাতা ছাড়াই!! আর তাইতো তার জন্য বেতন ভাতা নিয়ে এসেছিলেন স্বয়ং নবী সা.!! (সুবহানআল্লাহ)!!
❣️একবার রামাদ্বান মাসে সৎপুর কামিল এম এ মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ আল্লামা রইছ উদ্দিন রাহ. (সৎপুরের মোহাদ্দিস সাব) স্বপ্নে দেখেন রাসুলে কারিম (সা.) একটি থলিতে কিছু স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে ফুলতলী সাহেব বাড়িতে এসে কাকে যেন খুঁজছেন । জিজ্ঞেস করা হল 'ইয়া রাসুলাল্লাহ সা. কাকে খুজছেন'। রাসুল সা. বললেন আমার প্রিয় ইমাদ উদ্দীনের খেদমতে খুশি হয়ে আমি এই উপহার নিয়ে এসেছি। (আল্লাহু আকবার)!! ।
🌎খিদ্বমতে খালক্ব বা মানব সেবা🌎
আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় সাবেক কিবলাহ (দা.বা.) এর জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে মানব সেবা। সেই সাত বছর বয়সে প্রতিবেশী এক অসহায় পরিবারের জীর্ণশীর্ণ ভাঙ্গা ঘর দেখে কেঁদে উঠেছিল তার কচি মন। মুহতারাম বাবা (সাহেব কিবলাহ রহ.) এর কাছে এসে বায়না ধরেন ঘরটি মেরামত করে দিতেই হবে। বাবা সন্তানের এমন আচরন দেখে বিস্মিত হলেন এবং মহান রবের কাছে প্রাণ খুলে দোয়া করলেন। সাহেব কিবলাহ রহ. বললেন, বাবা কেঁদনা, ইনশাআল্লাহ প্রতিবেশীর ঘর মেরামত করা হবে। এ কথা শুনে চোট্ট শিশু বড় সাহেব কিবলাহর মন আনন্দে ভরে উঠল, প্রতিবেশীর ঘর মেরামতে শ্রমিকদের সাথে তিনিও অংশগ্রহন করলেন। মানব সেবায়, অসহায় বনী আদমের কান্না ঘুচাতে, অশ্রু মুছতে সেই যে শুরু আজ অবধি এ-কাজ রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে করেই যাচ্ছেন। মানব সেবাই যেন তার সাধনা, তার ব্রত !! একবার বড় সাহেব কিবলাহ বললেন (আমাকে), মানুষ অনেক ভাল ভাল (খোয়াব) স্বপ্ন দেখে! কিন্তু আমি দেখিনা!! যখনই দেখি তখন আমার এতিম, অন্ধ, আতুরদেরই দেখি!!
এতিম অনাথদের নিয়ে সম্প্রতি বড় সাহেব কিবলাহ একটি আবেগপূর্ণ অনুভুতি প্রকাশ করেন! তিনি দোয়া পুর্ব এক বক্ত্যবে এতিমদের উদ্দেশ্য করে বলেন। "আগে কোথায় যেতে হলে মা বাবাকে কদমবুচি করতাম, তারা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করতেন!! মা বাবা পরপারে তাই তোমাদের দোয়া-ই এখন সবকিছু"।
আল্লাহ তা'লা কোরআনে কারিমে বলেন: তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করিনা। (সুরা আল-ইনসান:৯)।
বড় সাহেব কিবলাহের জীবন এর বাস্তব নমুনা। বড় সাহেব কিবলাহের এ মন মানসিকতার ফলে বিভিন্ন সময়ে সূচিত হয়েছে বহু কর্মসূচির।
(১): লতিফিয়া এতিমখানা
১৯৭২ সালে সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. অসহায় এতিম অনাথের জন্য প্রতিষ্টা করেন "লতিফিয়া এতিমখানা ফুলতলি" সূচনালগ্ন থেকেই বড় সাহেব কিবলার সরাসরি তত্বাবধানে এই প্রতিষ্টানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে (২০১৭) প্রায় ১৭০০ এতিম এখানে আছে।
✔️লতিফীয়া এতিমখানা
এতিমদের নিয়েই বড় সাহেব কিবলার সব। এতিমদের সুখে তিনি হাসেন, দুঃখে কাঁদেন । আর এমনটি হবেইনা কেন? বিশ্বস্থ সুত্রে জেনেছি সাহেব কিবলাহ রহ. বলতে "আমার বড় বেটারে যদি অনাথ, এতিম অসহায়দের প্রেম দিয়ে ফিরিয়ে না আনতাম তাহলে তিনি সংসার ত্যাগি হতেন"! এতিমরাই বড় সাহেব কিবলাহকে প্রেমের বন্ধনে বেঁধে রেখেছে!! একবার বড় সাহেব কিবলাহ খুব আবেগপ্রবণ হয়ে বললেন (আমরা শুধু ৪/৫ জন লোক সেখানে ছিলাম)। "আমার একটি স্বপ্ন, হাজারো এতিমের অশ্রুঝরা মিছিল যেন আমার জানাযা কাঁধে নিয়ে গোরের তরে যায়"। বড় সাহেব কিবলাহ এতিমদেরকে কতো ভালবাসেন তা কখনো কল্পনাও করা যাবেনা। একটি উর্দু কবিতায় তিনি লিখেন:
آہ-آہ-آہ ان یتیموں کی ماں
آہ-آہ-آہ ان یتیموں کی باپ
وطن کو چوڑ کر پردیس چلے گئے
دار فانی کو چوڑ کر دار بقامین چلے گئے
ماں باپ کے فراق میں روتے رہں روتے راہں
آو دوستو ہم انکے کھانی سنے
انکی خدمت میں اپنی زندگی قربان کرے
অর্থ:
আহ-আহ-আহ এতিমের মা
আহ-আহ-আহ এতিমের বাপ
আপন বসত ছেড়ে পরপারে গেছেন চলে
নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে উর্দ্বজগতে গেছেন চলে
(এতিমরা) মা বাবার বিয়োগে কেঁদে কেঁদে পাগল প্রায়।
আসো হে প্রিয় দুস্ত, (এতিমদের) দুঃখগাথা কাহিনী শুনে যাও
এদের খেদমতে তোমার জীবন উৎসর্গ করে দাও।
সতিই বড় সাহেব কিবলাহ এতিমদের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। নিজের ঔরসজাত সন্তানদের চেয়েও এতিমদের তিনি বেশি ভালবাসেন। এতিমদের প্রতি তার ভালবাসা কতো গভীর তা ভাষায় ব্যক্ত করা কঠিন! আমি নিজে একটি ঘঠনার সাক্ষী হয়ে কিছুটা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০১০ সালের রামাদান মাস, সৌভাগ্যক্রমে আমি প্রায় এক সপ্তাহ এতিমখানায় অবস্থান করার সুযোগ পাই। ইফতারের পুর্বে প্রতিদিনই বড় সাহেব কিবলাহ গাড়ি করে এতিমখানায় আসতেন। এতিম অসহায়দের মধ্যে নিজ হাতে ইফতার বন্ঠন করতেন। ইফতার বন্ঠন শেষে তিনি এই এতিম অসহায়দের সাথেই ইফতার করতেন। আমি কৌতুহলী হয়ে দায়ীত্বশীলদের কাছ থেকে জানতে পারলাম, বড় সাহেব কিবলাহ নাকি প্রতিদিনই এখানে ইফতার করেন!! আরোও জানতে পারলাম যে যদি কখনো এতিমদের ইফতারে ঘাটতি হয় তখন পরিবারের ইফতার থেকে এনে প্রথমে এতিম অসহায়দের ইফতার করান। তার পরে যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে নিজে এবং পরিবারের লেকেরা ইফতার করেন! অন্যথায় পানি এবং খেজুরের মাধ্যমেই ইফতার সারেন। একদিন রামাদ্বানে বড়সাহেব কিবলার বড় সাহেবজাদা গুফরান আহমেদ চৌধুরীর শশুরালয় থেকে ইফতারী আসল, আমারও সেখানে নিমন্ত্রণ ছিল। মেহমানরা যথা সময়ে উপস্থিত, কিন্তু যার সন্তানের ইফতারী সেই ব্যক্তি সেখানে নেই! পরে জানতে পারলাম সেদিনও তিনি এতিম অসহায়দের সাথে ইফতার করেছেন!! (আল্লাহু আকবার)!!
এতিমরাও বড় সাহেবকে মহব্বত করে, কতটুকু করে বলা কঠিন! এতিমদের একজন সেদিন বলল: আমার বাবার শুন্যতা অনুভব করলে বুক ফেটে কান্না আসে, কিন্তু বড় সাহেব কিবলার স্নেহের পরশে সব ভুলে যাই!!
এতিমদের প্রতি বড় সাহেবের কতো গভীর টান, মাঝে মধ্যে বুঝা যায়, যখন কোথাও সফরে যান তখন প্রায় সময় তাকে এতিমদের জন্য চটপট করতে দেখা যায়। মনে হয় যেন এতিমদের জুদায়ী তিনি সহ্য করতে পারছেননা।
✔️লতিফীয়া এতিমখানা
লতিফিয়া এতিম খানা ফুলতলীর একজন এতিম জাবির হাসান তার কবিতায় এতিমদের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে তার একটি কবিতায় লিখে:
"আমি পুস্প কণা ফুলের কলি ফুলের মতো মন
এই ছোট্র মনে লুকিয়ে রাখা জীবন গড়ার পণ।
আমি মন্জিলেতে পৌছবো বলে ভিজাই দোয়ায় আঁখি
আমি ফুলতলীতে থাকি, আমি ফুলতলীতে থাকি।"
লতিফিয়া এতিমখানার ফুলের কলি এতিমরা সত্যিই ভাগ্যবান! ভালবেসে, আদর, স্নেহ করে দু'হাত তুলে তাদেরকে নিয়ে রাব্বে ক্বারীমের দরবারে আবদার করার জন্য প্রতিনিয়ত যে মহান ওলী তাদের পাশে আছেন তিনি হলেন বড় সাহেব কিবলাহ ফুলতলী। বড় সাহেব মাঝে মধ্যে দু'হাত তুলে অশ্রুসজল নয়নে বলেন: "খোদায়া হাম গোনাহগারও পর রহম করনা, ইয়াতিমওকো দুআ কবুল করনা"।।
এতিমরাও হৃদয়ের আকুতি জানাতে কেঁদে কেঁদে দু'হাত তুলে বলে উঠে, "রহমান রহিম আমরা এতিম, আমাদের দোয়া তুমি কবুল করো"।।
বড় সাহেব কখনো কখনো মদিনাওয়ালার নজরে করম চেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এতিমদের সাথে নিয়ে গেয়ে উঠেন, "ইয়া রাহমাতুল্লিল আ'লামীন, ইয়া শা'ফিআল মুজনাবিন, ইয়াতিমওকো সালাম কবুল করনা।
বড় সাহেব কিবলাহকে এতিমরাও তাদের প্রানের চেয়ে ভালবাসে, বড় সাহেব দুরে গেলে মনে হয় যেন তাদের প্রাণ চলে গেছে, কিন্তু বড় সাহেব যখন সফর থেকে বাড়ীতে ফিরেন তখন এতিমদের মধ্যে যেন ঈদের খুশি বয়ে যায়! মনে হয় যেন লক্ষ টাকা দিলেও তারা এমন খুশি হবেনা !!
বড় সাহেব কিবলাহ এতিমদের সব কিছুর চূড়ান্ত তদারকি নিজ থেকেই করে থাকেন। প্রায় দিনই এতিমদের নিয়ে পুকুরঘাটে যান। পুকুরের ঘাটের দিকে তাকালে যে কোন ব্যক্তিই এক বিরল দৃশ্যের মুখোমুখি হবেন, যা কখনো কোন পীরের দরবারে কল্পনা করতে পারবেননা!!
দেখতে পাবেন, ফুলতলীর হাজারো এতিমের হৃদয়ের স্পন্দন বড় সাহেব কিবলাহ এতিম ছেলেদের গায়ে-মাথায় সাবান লাগিয়ে সস্নেহে গোসল করিয়ে দিচ্ছেন। হাজারেরও অধিক এতিম লাইন দিয়ে বড়সাহেবের স্নেহ গায়ে মেখে সৃশৃঙ্খলভাবে গোসল করছে, বাবা-মার স্নেহের স্পর্শ যাদের ভাগ্যে নেই, তারা বড় সাহেব কিবলা'র মায়াভরা স্নেহস্পর্শে ধন্য হচ্ছে।
পিতৃস্নেহের বিকল্প হয়না ঠিক! কিন্তু বড়সাহেব কিবলা'র মমতামাখা স্পর্শ হাজারো এতিমের মাথার উপর ছায়াবৃক্ষের মত প্রসারিত দেখে মনে হয় যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধু ফুলতলীতেই এর বিকল্প সৃষ্টি করেছেন।
ওয়ালিদ মুহতারাম আল্লামা সাহেব কিবলাহ রহ. বছরের পর বছর যে আদর যত্নে অসহায় এতিম শিশুদের বড় করে তোলার শিক্ষা দিয়ে গেছেন, বড়সাহেব কিবলাহ পরম আন্তরিকতায়-নিষ্ঠায় যেন তা অনুকরণ করে যাচ্ছেন। দুনিয়ার প্রতিটি শিশু বেড়ে উঠার সময় মাতা-পিতার সান্নিধ্য চায়, স্নেহ, মায়া-মমতা চায়।
পারিবারিক পরিবেশে সেই স্নেহ, মায়া-মমতা আজ যেখানে বিরল হয়ে উঠেছে, সেখানে ফুলতলীর এতিমখানার শিশুরা বড়সাহেবের কী অপরিসীম স্নেহ, মায়া-মমতায় মানুষ হয়ে উঠছে, তার প্রমাণ এই এতিম শিশুদের মধ্য থেকে অসংখ্য আলেম, হাফেজ, কারী হিসেবে ইতোমধ্যে সম্মানজনক জীবনের পথ খুঁজে পেয়েছেন।
বড় সাহেব কিবলাহ হাজারেরও অধিক এতিমদের মনের যত্ন নেন। তাদের সাথে খেলাধুলা করেন। তাদেরকে সময় দেন। তাদের সাথে এতো সুন্দর কোমল ব্যবহার করেন, যার কারনে এতিমরা তাদের মা-বাবার বিকল্প হিসেবে বড় সাহেবকেই মনে করে। তারা মনে করে তাদের আশ্রয়ের স্থল বড় সাহেব।
আহমদ আল-মনজুর বলেন: এই কয়েকদিন আগে বড় সাহেব এতিমদের নিয়ে পুকুরে নৌকায় উঠে আনন্দ করেছেন। উঠার আগে বললেন,
"যে নড়াচড়া করবে! দুই জন তার দুই হাতের ডানা ধরে কুপুৎ করে পানি তে ছেড়ে দিবে।"
মনজুর আরো বর্ণনা করেন: "কানাকানি" নামে একটা বিনোদনমূলক খেলাও বড় সাহেব কিবলাহ এতিমদের সাথে করে থাকেন।
বড় সাহেব কোনো সময় এতিমদের মধ্যখানে বসা থাকেন। উনার কানে এসে গোপনে একজন অন্যজনের নাম বলবে। পরে যদি অন্যজন আসে এবং নামের সাথে মিলে যায় তাহলে তিনি ঝাপটা মেরে ধরে তাকে পাশে বসিয়ে দেন। অর্থাৎ এই ব্যক্তি আর খেলতে পারবে না। পরাজিত।
এতিমদেরকে নিয়ে আরেকটি প্রতিযোগিতামূলক বিনোদন তিনি করেন যেটি তাদের ব্যায়ামের জন্য ও ফলদায়ক:
পুকুরের ওপাড়ে সব নারিকেল গাছে লাল ফিতা বাঁধা থাকবে। এ পাড় থেকে যে আগে সাঁতার কেটে ও পাড়ে যাবে সে হবে প্রথম, এর পরের জন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হবে। তাদের জন্য পুরস্কার ও থাকে। এভাবে আরও অসংখ্য বিনোদনমূলক খেলা তিনি খেলে থাকেন।
✔️লতিফীয়া এতিমখানা
আল্লামা হুসাম উদ্দীন চৌধুরী ছোট সাহেব ফুলতলী একদিন বলেছিলেন, "আমি বহুদেশ ভ্রমণ করেছি, বহু বুযুর্গ দেখেছি, বহু মানবতাবাদী দেখেছি, কিন্তু বড় সাহেবের মতো কাউকে আজো খুঁজে পাইনি"।) আহমেদ আল-মনজুর (ফুলতলীতে অধ্যায়নরত) বলেন "২০১৩ সালে জকিগঞ্জের সাবেক ওসি মহোদয় তাকে এমনটিই বলেছেন এবং সহমত পোষণ করেছেন।
আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় সাহেব কিবলাহ শুধু এতিমদের মহব্বত করে ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাই করেননা বরং তাদের মেধা বিকাশের সবধরনের ব্যবস্থাই করে থাকেন। বড় সাহেব কিবলার তত্ত্বাবধানে অসহায় এতিমদের জন্য যোগোপযোগী শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কারীগরী প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। তাদের মেধা বিকাশের লক্ষ্যে সেখানে রয়েছে বহুমুখি কার্যক্রম। যেমন, সাপ্তাহিক সভা, বিভিন্ন দিবস উদযাপন,কম্পিউটার কুইজ প্রতিযোগিতা, বার্ষিক শিক্ষা সফর, সমৃদ্ধ লাইব্রেরী, হাতের লেখার উপর প্রতিযোগিতা, কুরআন শরীফের বিভিন্ন সূরা মুখস্থ করার উপর প্রতিযোগিতা, নিয়মিত খানকায় যিকির ও তরবিয়ত মাহফিলে অংশগ্রহন, আর্ট প্রশিক্ষণ, ইংরেজী প্রশিক্ষণ কোর্স, বিভিন্ন বৃত্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ, বার্ষিক স্কাউট এ অংশগ্রহণ ইত্যাদি।
ছাত্রদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে সেখান থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়- মাসিক দেয়ালিকা (আল-মানার), বিদায়ী স্মারক (গুলিস্তানে লতিফি)। তাদের থাকার জন্য ১টি ডাইনিং হল সহ ১৩টি তিন তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং রয়েছে। তাদের পরিবহনের জন্য রাখা আছে তিনটি গাড়ী। চিকিৎসার জন্য সর্বক্ষণিক একজন ডাক্তার ও একটি ডিসপেন্সারীর ব্যবস্থা রয়েছে। তারা যাতে খেলাধুলায় কমতি অনুভব না করে সে জন্য বাদ আছর তাদের জন্য খেলার সময় নির্ধারণ করা আছে। যাবতীয় খেলা এবং খেলার সামর্গ্রী তাদের দেওয়া হয়। তাছাড়া ছোট শিশুদের জন্য ক্যাম্পাসের ভিতরে একটি পার্ক তৈরী করা হয়েছে।
তাদেরকে বাকপটু করার লক্ষ্যে সপ্তাহিক সভায় মাঝে মাঝে অনুষ্টিত হয় "মুনাযারা"র (বিতর্কের) আসর। ইসলামী সংস্কৃতির আওতা ভুক্ত "গজল সন্ধ্যা"য় তারা উপভোগ করে সুললিত কন্ঠে মধুর হামদ/না'ত। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে তারা রাসূলের শান মান গাওয়ার উদ্দেশ্যে বের করে রেলী। তাছাড়া দেশ ও বিশ্বের খবর জানতে সেখানে প্রতিদিন পত্রিকা রাখা হয়। কারীগরী প্রশিক্ষণের জন্য আছে কম্পিউটার, সেলাই, ইলেকট্রিক ও মটর ড্রাইভিং। মোট কথা কোন কিছুর কমতি নেই তাদের মাঝে।
বড় সাহেব কিবলাহ অসহায় এতিমদের সবধরনের দ্বায়িত্ব তদারকির পাশাপাশি তাদের অসহায় পরিবারের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। প্রতিবছর অসহায় পরিবারের জন্য নিজ হাতে ঘর তৈরি করে দেন। তাদের পরপারে পাড়ি জমানো মা-বাবার জন্য রাব্বে কারীমের দরবারে বিনায়াবনত হয়ে অশ্রুসজল নয়নে দু'আ করেন।
🔹৮৬০ বছর আগের এমন একটি খেদমত আজো চলছে!!
আমি ২০১১ সালে মরক্ষোর মারাকিস শহরে গিয়ে স্ব-চক্ষে বড় সাহেব কিবলার খেদমতের মতোই এমন একটি মক্ববুল খেদমত দেখে আশ্চর্য হলাম । ১১২৯ সালে জন্মগ্রহনকারী আল্লাহর এক মকবুল ওলী সাইয়্যিদি বিন আব্বাস আহমাদ সাবতি আল-খাজরাজী, অন্ধ, এতিম, অসহায় বণি আদমদের জন্য যে কল্যানকর কাজ শুরু করেছিলেন সেটা আজো সেখানে চলছে (সুবহানাল্লাহ)। আমার বিশ্বাস ইনশাআল্লাহ বড় সাহেব কিবলার এই খেদমত ও ক্বিয়াম পর্যন্ত চলবে।
সাইয়্যিদি বিন আব্বাস আহমাদ সাবতি আল-খাজরাজী সম্পর্কে একজন লিখকের মন্তব্যে: Sidi Bin Abbas Al-Khajraji (1129 CE) was a great patron of the poor and particularly the blind in the twelfth century. Even today, food for the poor is distributed regularly at his tomb.
**মানব সেবায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পসমূহ**
সাইয়্যিদুল মুরসালীন হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ সব রসুল ও নবীদের সুন্নাত হল মানব সেবা। মানব সেবার মাধ্যমেই আল্লাহর সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।
সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহ. প্রায়ই বলতেন "যারা মানুষের সেবা করে বংশ পরস্পরায় তাদের সাত সিড়ি পর্যন্ত উজালা হয়ে যায়"।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়। [মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি]
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সমগ্র জীবনে সাহায্য প্রার্থীর প্রতি অকৃপণভাবে হাত বাড়িয়েছেন। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেছেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কখনো কোনো সাহায্য প্রার্থীকে না বলেননি। মানব সেবাকে তিনি তার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কোনো অবস্থায় এ ব্রত থেকে বিচ্যুতি হননি। মদিনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও তিনি বিলাসী জীবনযাপন করেননি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার কাছে যেসব উপহার আসত তিনি তা গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। তার ওফাতের সময় পরিবারের জন্য দুই দিন ঘরের রুটি পেট পুরে খাওয়া যায় এমন সঞ্চয় ছিল না।
বড় সাহেব কিবলাহ (আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী) যুগের মুজাদ্দিদ সাহেব কিবলাহ রহ. এর সুযোগ্য উত্তরসুরি, নবী সা. এর খাঁটি প্রেমিক এবং ওয়ারিস, তাই মানব সেবায় জীবনের উষালগ্ন হতেই অন্তপ্রাণ। তিনি এতোটাই অন্তপ্রাণ কখনো কখনো নিজের পরনের কাপড় পর্যন্ত অসহায় মানুষকে দান করে সতর ঢাকার জন্য শুধু একটি চাদরে নিজকে আবৃত করে রাখেন।
মানবসেবার প্রতিটি কাজই তিনি শুরু করেন আল্লাহ ও তার হাবিব সা. এর সন্তুষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে। অল্প পরিসরে ও নিজস্ব তহবিল থেকে! পরবর্তিতে সমাজের ভিত্তবানদের সহযোগীতায় অনেক বড় প্রকল্প হয়ে যায়। তার পীর ও মুরশিদ, ওয়ালিদ মুহতারাম সাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ. এর জীবদ্দশায় প্রতিটি কর্মসুচী শুরুর আগে তিনি তার থেকে দুআ নিতেন। সাহেব কিবলাহ রহ. প্রাণ খুলে দুআ করতেন এবং নিজ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগীতা করে মহান রবের কাছে সোপর্দ করতেন।
মানব সেবায় তার মাধ্যমে বহুমুখি প্রকল্প চালু আছে ।
**মানব সেবায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পসমূহ**
বর্তমানে (২০১৭ সাল) প্রায় ৪২টির মতো প্রজেক্ট চালু আছে।
(১): সাহেব কিবলাহ রহ. এর ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে প্রতি শনিবার বিধবা ও মিসকিনদের মধ্যে শিরনী বিতরন। (২): মাসিক খানকা (৩): গৃহ নির্মান প্রকল্প (৪): গরীব অন্ধ সাহায্য প্রকল্প (৫): গরীব আতুর সাহায্য প্রকল্প (৬): গরীব বিধবা সাহায্য প্রকল্প (৭): সদ্য বিধবা সাহায্য প্রকল্প (৮): এতিম বৃত্তি প্রকল্প (বার্ষিক) (৯): খতনা প্রকল্প (১০): বিবাহ সাহায্য প্রকল্প (১১): হালাল রোজগারের উপকরন (কুড়াল, দা, কাচি, কুদাল, জাল, ড্রিল মেশিন ইত্যাদি) (১২): সেলাই মেশিন সাহায্য প্রকল্প (১৩): হালাল রোজগারের জন্য পশু পালন (গরু, ছাগল) (১৪): বহুমুখি শিক্ষা প্রকল্প (কম্পিউটার, সেলাই, ড্রাইভিং ইত্যাদি)। (১৫): চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প (ছানি অপারেশন)। (১৬): স্যানিটেশন প্রকল্প (১৭): কুরবানী প্রকল্প (১৮): রিক্সা বিতরন প্রকল্প (১৯): আতুরদের (পঙ্গুদের) মধ্য হুইল চেয়ার ও বগলী বিতরন। (২০): ঠেলাগাড়ী বিতরন প্রকল্প । (২১): ভ্যানগাড়ী বিতরন প্রকল্প। (২২): রামাদ্বান শরীফে বিধবা ও মিসকিনদের ইফতার বিতরন প্রতিদিন । (২৩): এতিম মিসকিন ও বিধবাদের মধ্যে কুরআন শরীফ বিতরন। (২৪): বৃদ্ধকে কাপড় দান (পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, লুঙ্গি, টুপি, মশারী, লেফ, তোষক ইত্যাদি। (২৫): গরীবদের মধ্যে শিতবস্ত্র বিতরন (কম্বল, মাফলার, সোয়াটার, চাদর ইত্যাদি। (২৬): গরীবদের মধ্য বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ধানের চারা বিতরন। (২৭): গরীবদের মধ্যে চৌকি বিতরন। (২৮): বৃক্ষ রোপন প্রকল্প । (২৯): দুর্যোগ ত্রাণ বিতরন প্রকল্প। (৩০): মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প । (৩১): ব্যবসার পুজি সহ দোকান প্রদান প্রকল্প। (৩২): রামাদ্বান শরীফে তালাবাদের মধ্যে লুঙ্গি বিতরন প্রকল্প। (৩৩): গরীবদের মধ্যে নৌকা বিতরন। (৩৪): টিউবওয়েল ও পুকুর খনন প্রকল্প । (৩৫): এতিম ছাত্রদেরকে কাপড়, তৈল, সাবান, পাঞ্জাবি, টুপি, লেফ, তোষক ইত্যাদি। (৩৬): গরীবদের মধ্যে কলস, জায়নামায,লাঠি, চিলিমচি, বদনা ইত্যাদি বিতরন। (৩৭): গরীব মহিলাদের মধ্যে কলস, জায়নামায, লাঠি, চিলিমচি, বদনা ইত্যাদি বিতরন। (৩৮): জেনারেটর দান। (৩৯):এতিম ছাত্রদের স্কুল ড্রেস দান। (৪০): লতিফিয়া এতিমখানায় চৌকি দান প্রকল্প। (৪১): লতিফিয়া এতিমখানায় ১টি রুম (কক্ষ) নির্মান প্রকল্প। (৪২): এতিম ছাত্রদের নগদ টাকা প্রদান। (৪৩): রামাদ্বান শরীফে মিসকিন ছাত্র/ছাত্রীদেরকে কাপড় দান (পাঞ্জাবী, পা'জামা, টুপি, লুঙ্গি, থ্রি-পিছ, ও ফ্রগ ইত্যাদি। (৪৪): গৃহ জ্বালা পরিবারকে ডেগ, ডেগচী, কলস, পরিবারের সবার কাপড় ও নগদ সাহায্য ইত্যাদি।
আর্ত মানবতার সেবায় বড় সাহেব কিবলার অনসৃত নীতি।
আর্ত মানবতার সেবায় নিবেদিত ধর্ম হলো ইসলাম। ইসলামই প্রথম বলেছে, মানুষ মানুষের জন্য। শান্তি ও মুক্তির ধর্ম ইসলামে যে পরিমাণ মানবসেবা এবং পরোপকারের দৃষ্টান্ত রয়েছে পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মে তা খুঁজে পাওয়া দুস্কর। মানবসেবা এবং উদারতার নীতিকে অবলম্বন করেই দুর্বার গতিতে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বিস্তার লাভ করেছে ইসলাম। সৌম্য শান্তির এ ধর্ম মানুষকে মানবতা শিখিয়েছে। বিপদ-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা প্রদান করেছে। রহমতে আলম (সা.) সারাজীবন মানুষের উপকার, মানবসেবা ও মানবকল্যাণ করেছেন। মানবসেবার এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে প্রিয় নবী (সা.) এর ছোঁয়া লাগেনি। নবী (সা.) এর সব সাহাবিই ছিলেন মানবতা ও মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও নক্ষত্র। প্রত্যেক সাহাবির জীবন ছিল আর্তমানবতার সেবার মহান ব্রতে পরিপূর্ণ। কেবল নবী (সা.) ও সাহাবারাই নন; গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যেসব ওলী-আউলিয়া ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন, তারা সবাই ছিলেন মানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ। সামাজিক জীবন সুস্থ-সুন্দর হওয়ার জন্য মানবতাবোধের কোনো বিকল্প নেই। আর এ কারণেই মানবসেবাকে ইসলাম শুধু মানবতার বিষয় হিসেবেই রাখেনি বরং একে উল্লেখ করেছে এক মহৎ এবং পুণ্যের কাজ হিসেবে। সঙ্গে সঙ্গে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে মানবসেবার ব্রতকে। কোরআনে কারিমের সূরা দাহারে বলা হয়েছে, 'وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا
আর (তারা তাদের খাবারের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও) আল্লাহর মহব্বতে মিসকীন, ইয়াতীম এবং বন্দীকে খাবার দান করে। (৭৬:৮)।
এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা অসহায়, মিসকিন ও বন্দিদের খাবার দান করাকে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন।
রহমতে আলম (সা.) ও যে কোনো মূল্যে গরিব-অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার কথা বলেছেন, চাই তা হোক অর্থের, অন্নের কিংবা হোক ভালো ব্যবহার বা মিষ্টি কথার মাধ্যমে। যার যতটুকু সাধ্য, সে ততটুকু পরিমাণ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসবে।
বড় সাহেব কিবলাহ আল্লাহর মাকবুল ওলী, ওয়ারিসে রাসুল (সা.) তাই তার জীবনেও কোরআন পাকের উপরোক্ত আয়াত এবং রাসুল (সা.) এর সুন্নতের বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়। তিনি মানবতার সেবায় কোন প্রকল্প চালু করার আগে কাজটি ইখলাসের সাথে আল্লাহর ওয়াস্তে হচ্ছে কি না তা যাচাই করে দেখেন। কোরআন ও হাদিস পাকের অনুপম দিক নির্দেশনাই হলো তার কাজের মূলমন্ত্র । ফুলতলীর গরীব সাহায্য প্রকল্প সম্পর্কে তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে একটি হাদিসে পাকের উল্লেখ করে লিখেন: স্বামীহারা মহিলা ও মিসকিনদের জন্য প্রচেষ্টাকারী (অর্থাৎ খেদমতকারী) আল্লাহর পথে জীহাদকারীর ন্যায় । সারাদিন যে রোযা রাখল, সারারাত যে ইবাদত করল তার সমতুল্য।
আর্ত মানবতার সেবায় বড় সাহেব কিবলার অনসৃত নীতি।
❣️মানবাতার সেবায় নিভৃতচারী এক মহামানব:❣️
অনাথ এতিম অসহায় বণি আদমের সেবা তিনি নিরবে নিভৃতে আজীবন করে যেতে চান।
বৃক্ষরোপন প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন: আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের অজ্ঞাত পরিচয় গ্রামের মানুষ যারা ঝরা পালকের ভষ্ম স্তুপে নীড় রচনা করে কোনমতে বেঁচে আছে তাদের মাঝখানে যদি কিছুদিন বেঁচে থাকি তবে বৃক্ষ রোপন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ । শ্যামল সুন্দর ছায়া ঢাকা, মায়া মাখা গ্রাম বাংলার লোকালয়ে দু'একটি বৃক্ষ রোপন করে যাই। স্মৃতিটুকু থাক আল্লাহর ওয়াস্তে, আমরা থাকি অজ্ঞাত। (ফুলতলী গরীব সাহায্য প্রকল্প-২০১৬: পৃষ্টা ১৩)।
তিনি (বড় সাহেব কিবলাহ) এই পর্যন্ত (২০১৭) প্রচার প্রসার ছাড়াই ইখলাসের সাথে মানবতার জন্য কয়েক লক্ষ বৃক্ষ রোপন করেছেন। বৃক্ষ রোপনে তার প্রেরনার উৎস হলেন নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা., পীর ও মুরশিদ সাহেব কিবলাহ রহ. এবং শ্রীমঙ্গলের গাছ পীর রহ.।
উল্লেখ্য আমাদের দেশের কোন মহান নেতা বা দাতা যদি এর সিকি ভাগ কাজও করতেন তাহলে প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কিংবদন্তি হয়ে থাকতেন। কিন্তু আল্লাহর মক্ববুল বান্দাহ বড় সাহেব কিবলাহ শুধু দয়াময়ের খুশির জন্যই কাজ করেন এবং প্রচার প্রকাশকে, মানুষ দেখানো রিয়াযুক্ত ইবাদতকে মনে প্রাণে ঘৃনা করেন। তাইতো বড় সাহেব কিবলাহকে দেখে বিশ্ব্যবরেন্য ক্বারী ইয়াসির আব্দুল বাসিত বিন আব্দুস সামাদ (মিশর) বলেছিলেন "বর্তমান বিশ্বে বড় সাহেব কিবলার মত এমন ওলী পাওয়া দুস্কর! তিনিই প্রথম ব্যক্তি যাকে দেখে সাহাবাদের যুগের কথা মনে পড়ছে!! সত্যিই বড় সাহেব কিবলাহ বর্তমান বিশ্বে খেদমতে খলক্বে অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব এক মহান ওলী।
বড় সাহেব কিবলাহ নিজের কোন হিসাব রাখতে মোটেই আগ্রহী নন। কোন কাজ করার পর সেটা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে কিনা সেটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যপার। তিনি লিখেন "অতিতে কি করেছি সেটা হিসাব না করাই উত্তম। কারন যে যা করেছে তা আল্লাহর তা'লার দরবারে কতটুকু কবুল হয়েছে আর কতটুকু নিয়তের দোষে নষ্ট হয়ে গেছে তা আমরা জানিনা। (ফুলতলী গরীব সাহায্য প্রকল্প-২০১৬: পৃষ্টা ১৩)।
★অনাথ এতিম অন্ধ আতুরদের ব্যপারে বড় সাহেব কিবলার ধ্যান-ধারনা।
অসহায় বনী আদমের জন্য যার দরদী মন প্রতিনিয়ত কেঁদে উঠে তিনি হলেন মানব সেবার এক অনন্য আদর্শ আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী (বড় সাহেব কিবলাহ ফুলতলি) । একবিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তিবিদ্যার চরম উন্নতির যুগে এসেও এমন একজন নিভৃতচারী মানবসেবী মহামানব পাওয়া দুস্কর । তথাকতিত সমাজ সেবকরা যখন প্রযুক্তির সাহায্যে প্রচার প্রসারে ব্যস্ত, এমনি সময়ে আল্লাহর মাহবুব বান্দাহ বড় সাহেব কিবলাহ আল্লাহ এবং তার হাবিবকে রাজি খুশি করার কাজে ব্যস্থ।
অসহায় মানুষের নুন্যতম উপকারে তার মনে তৃপ্তি জাগে, লাভ করেন নবপ্রাণ, তাইতো রাতবিরাতে ছুটে যান দুঃখি মানুষের আঙিনায়। তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো, তাদের মুখে অকৃত্রিম হাসি ফোটানো তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। বড় সাহেব কিবলাহ বলেন, "বড় অবহেলা ভরে যৌবনের দিনগুলো শেষ করেছি। এখন আমিও বৃদ্ধ; কিন্তু অন্ধ, অনাথ, আতুর, এতীমদের দুঃখের আলয় দর্শনের অভিলাস আমাকে যুবকের শক্তি দান করে।" আমি আমার আত্মার আত্নীয় অন্ধ-আতুর এতীম ও বিধবার একটি বিরাট শোক মিছিলে আত্নগোপন করতে চাই। এ কাফেলার সবচেয়ে অসহায় মানুষরূপে আমার আমিত্বকে বিসর্জন দিতে চাই।"
অন্ধ-আতুরদের সাহায্যের ব্যপারে তার দরদী মন যেন সবসময় বিচলিত থাকে। তাইতো তাদের ব্যাপারে তার প্রস্তাবনা হচ্ছে— আমরা অন্ধ আতুরদের এমন কোন প্রশিক্ষন দানের চিন্তা করা উচিত, যে প্রশিক্ষনের দ্বারা তারা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিস্কৃতি লাভ করতে পারে। তবে সকল অন্ধ ও আতুর হাতের দ্বারা কাজ করতে সক্ষম নয়। এ ধরনের প্রচেষ্টা দ্বারা তারা হয়তো তাদের অনেকেরই খাদ্য সংস্থানের ব্যবস্থা করে নিতে সক্ষম হবে, কিন্তু তারা যে জীর্ণ কুঠিরে বাস করে সে কুঠিরখানা (ঘর) কাট টিন দিয়ে তৈরি করা সম্ভবপর হবেনা। পরিবারের সবাইকে শীতবস্ত্র, পরিধেয় বস্ত্র দেয়া সম্ভব হবেনা ।
অসহায় অনাথ এতিমদের ব্যপারে বড় সাহেব কিবলাহ তার কবিতায় বড় আবেগ নিয়ে লিখেন—
দেখি গ্রাম বাংলার শতশত ঘরে
মনে হয় যেন যুগ যুগ ধরে
স্বামীহারা বিধবার অশ্রুজল ঝরে
ধুলো মাখা এতিমের ভাষা নাই মুখে।
(সাধারন কবিতা ৭)
**অসহায় মানুষের সেবায় বড় সাহেব কিবলাহের লালিত স্বপ্ন এবং তাদের নিয়ে কবিতাগুচ্ছ ।**
আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় সাহেব কিবলাহ ফুলতলী অন্ধ, আতুর, ইয়াতিম, মিসকীন তথা অসহায় বণি আদমের খেদমত করেন দুনিয়ার কোন মোহে নয় বরং পরকালে প্রাপ্তির লক্ষ্যে। তিনি লিখেন: "হয়তো আমার এ পৃথিবী থেকে বিদায়ের শেষ মিছিলে দু'একজন অন্ধ, আতুর ও এতীম অংশগ্রহণ করবে! কম্পিত হাতে হয়তোবা কোন অন্ধ, আতুর ও এতীম আমার কবরের বুকে তার নয়নজলে সিক্ত এক মুঠি মাটি রাখবে। হয়তো কোন এতীম তার কচি হাতে আমার এতিম ছেলেদের সাথে আমার কবরের বুকে তার নিস্পাপ চোখের জলে সিক্ত এক মুঠি মাটি রাখবে।
তিনি অসহায়, দুস্থ মানুষের মনের বেদনা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন। তিনি তাদেরকে শুধু বৈষয়িক সাহায্য দিয়ে ক্ষান্ত হন না বরং তাদের ভগ্ন হৃদয়ে আশার প্রদীপ জ্বালেন।
তিনি ইয়াতীম-নিঃসম্বল সম্পর্কে কবিতা লিখেছেন-
পিতার কবর
জননীর ঘর
নয়নের জলে সিক্ত
বিশাল ধরণী
ওগো মা জননী
আমাদের হাত রিক্ত ।
(এতিমের ব্যথা; সাধারন কবিতা-৩৪)।
অসহায় জন্মান্ধদের ব্যপারে তিনি লিখেন—
চোখ আছে তবু জ্যোতিহীন
আলো আঁধারের খেলা,
এ জনমে দেখিনাই কোন দিন
ভবের বিচিত্র মেলা।
(অন্ধের ফরিয়াদ; সাধারন কবিতা-৩৩)।
অন্ধদের মনের বেদনা তাহার অন্য কবিতায় ফুঠে উঠেছে :
নয়নের আলো নিভিয়ে গেল
চেনা জানা পৃথিবী আর দেখিবনা
এ ভবের মায়া যেন এক ছায়া
ছায়া দেখে এ জীবনে আর কাঁদিবনা।
(নয়নের আলো; সাধারন কবিতা)।
তথ্যসূত্র:
১: ক্ষণজন্মা মনীষী, আহমদ হাসান চৌধুরী
২: আল্লামা ফুলতলী সাহেব কিবলাহ রহ স্মারক ২০১৪
৩: ফুলতলীর বড়সাহেব : মানবসেবাব্রতীর এক অনন্য প্রতিকৃতি: ইউসুফ শরীফ
৪: গুলশানে ইয়াকুবি ২০১৬
৫: ফুলতলী গরীব সাহায্য প্রকল্প-২০১৬।
৬: বালাই হাওরের কান্না।
৭: চল মুসাফির পাক মদিনার সবুজ মিনার ঐ দেখা যায়
৮: অনলাইন সংগ্রহ, (১) আব্দুল মুকিত, (২) আহমেদ আল-মনজুর, (৩) জাবির হাসান
৯: ব্যক্তিগত সংগ্রহ
# সংকলনে: এম এ বাসিত আশরাফ