ইসলামের কন্ঠইসলামের কন্ঠ
সম্পাদকীয়আর্কাইভআমাদের পরিচিতিলেখা পাঠানোর নিয়মাবলীযোগাযোগের মাধ্যম
হাদীস শরীফ

আল কোরআনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা। আর মিলাদ ও নবী দুটি শব্দ একত্রে মিলিয়ে মিলাদুন্নবী বলা হয়। আর নবী শব্দ দ্বারা রাহমাতুলি্লল আলামিন হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) কে বোঝানো হয়েছে। এককথায়, ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ হুজুর পাক (সা.) এর পবিত্র ‘বেলাদত শরিফ’ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা।

এম এ বাসিত আশরাফ
আল কোরআনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা। আর মিলাদ ও নবী দুটি শব্দ একত্রে মিলিয়ে মিলাদুন্নবী বলা হয়। আর নবী শব্দ দ্বারা রাহমাতুলি্লল আলামিন হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) কে বোঝানো হয়েছে। এককথায়, ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ হুজুর পাক (সা.) এর পবিত্র ‘বেলাদত শরিফ’ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা।

আর পরিভাষায় বললে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর শুভাগমন স্মরণে খুশি প্রকাশ করে মিলাদ শরিফ মাহফিলের ব্যবস্থা করা, শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা আলোচনা করা, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, তাওয়াল্লুদ বা জন্মকালীন ঘটনা মজলিস করে আলোচনা করা, দাঁড়িয়ে সালাম, কাসিদা বা প্রশংসামূলক কবিতা, ওয়াজ-নসিহত, দোয়া-মোনাজাত, সম্ভব মতো মেহমান নেওয়াজির সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করা।

মহানবী (সা.) এর জন্মদিন সম্পর্কে আল কোরআনে আলোচনা করা হয়নি। কিন্তু হাদিস শরিফে মহানবী (সা.) এর জন্মকাল সম্পর্কে জানা যায়। হজরত আবু কাতাদা আল আনসারি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনেই আমি নবুয়ত পেয়েছি।’ (মুসলিম)।

ঐতিহাসিক মুহাম্মদ বিন ইসহাক (রহ.) এর মতে, রাসূল (সা.) হাতি সালের (৫৭০ খ্রি.) রবিউল আউয়াল মাসে ১২ তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। (আর রউজুল উনুফ ২৭৬/১)।

নবী করিম (সা.) সোমবার রোজা রেখে নিজের জন্মদিন স্মরণ করতেন। এর দ্বারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতা ও গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। তারপরও কিছু লোক ঈদে মিলাদুন্নবী পালন সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। তাদের জবাবে কোরআন মজিদ থেকে কয়েকটি দলিল পেশ করা হলো, যাতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস স্মরণ করার হুকুম দিয়েছেন

মিলাদের কোরআনিক দলিল

১নং দলিল : হে রাসূল (সা.) আপনি বলুন_ আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর করুণায় সুতরাং এতে যেন তারা আনন্দিত হয়। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে, যা তারা সঞ্চয় করেছে। (সূরা ইউনুস : ৫৮)। এ সম্পর্কে তাফসিরে তাবারি, রুহুল মায়ানি এবং আদ-দুররে মানসুরে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে_ ফজল দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলাম আর রহমত দ্বারা উদ্দেশ্য কোরআন। মুফতি শফী (রহ.) বলেন, মানুষের কর্তব্য হলো আল্লাহ তায়ালার রহমত অনুগ্রহকেই প্রকৃত আনন্দের বিষয় মনে করা এবং একমাত্র তাতেই আনন্দিত হওয়া। (মারেফুল কোরআন : ৬১১ পৃষ্ঠা)।

২নং দলিল : আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যা তোমাদের আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন।’ হজরত ওমর (রা.) বলেন যে, এই নেয়ামত দ্বারা মুহাম্মদ (সা.) কে বোঝানো হয়েছে। (বোখারি দ্বিতীয় খ- পৃষ্ঠা : ৫৬৬)।

৩নং দলিল : ‘এবং শান্তি তাঁরই ওপর যেদিন জন্মগ্রহণ করেছেন, যেদিন মৃত্যুবরণ করবেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।’ (সূরা মরিয়ম : ১৫ )। এ আয়াতে হজরত ইয়াহ্ইয়া (আ.) এর সম্পূর্ণ মিলাদ বর্ণনা করা হয়েছে।

৪নং দলিল : আল্লাহ তায়ালা হজরত ঈসা (আ.) এর কথা উদ্ধৃত করেন, ‘এবং ওই শান্তি আমার প্রতি, যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি, এবং যেদিন আমার মৃত্যু হবে, আর যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।’ (সূরা মরিয়ম : ৩৩)। এ আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা মরিয়ম (আ.) এর গর্ভে হজরত ঈসা নবী (আ.) এর জন্মের কথাও জানিয়েছেন।

৫নং দলিল : পবিত্র কোরআনে আরও আছে, ‘তাদের (মানুষ) আল্লাহর দিনগুলো সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিন।’ (সূরা ইবরাহিম : ৫)। এ আয়াতে ‘আল্লাহর দিনগুলো’ হলো সেসব দিন, যাতে বড় বড় ঘটনা ঘটেছিল বা এমনসব দিন যেগুলোতে আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি তাঁরই বড় নেয়ামত তথা আশীর্বাদ বর্ষণ করেছিলেন। নবী পাকের জন্মদিন বড় ঘটনার অন্যতম।

৬নং দলিল : ‘এবং আপনার প্রতিপালকের নেয়ামতের বেশি বেশি আলোচনা তথা প্রচার-প্রসার করুন।’ (সূরা দোহা : ১১)। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ‘নেয়ামত’ শব্দটির ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আয়াতে উলি্লখিত ‘নেয়ামত’ শব্দটি দ্বারা নবুয়ত ও দ্বীন ইসলামকে বোঝানো হয়েছে।’ (তাফসিরে ইবনে আব্বাস, সূরা দোহা : ৬৫১ পৃষ্ঠা)।

৭নং দলিল : আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর রাসূলদের কাহিনী থেকে সবকিছু আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি এজন্য যে, সেসবের দ্বারা আমরা আপনার চিত্তকে বলিষ্ঠ করবো।’ (সূরা হুদ : ১২০)। আমরা দেখলাম, উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবী ও রাসূলদের আলোচনাকে মোমিনদের ঈমান ও শক্তিবর্ধক হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ আয়াতে নবী-রাসূলদের জীবনী আলোচনা করার বৈধতা ফুটে ওঠে।

৮নং দলিল : ‘আর যে আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করবে, সেটা তার কলবে তাকওয়ার পরিচয়বাহক।’ (সূরা হজ : ৩৬)। ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা’ নামক কিতাবে বলা হয়েছে_ আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে চারটি- ১. কোরআন মাজিদ, ২. কাবা শরিফ, ৩. নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ৪. নামাজ ফায়েদা : নবীকে তাজিম করা তাকওয়ার পরিচয়বাহক। আর মিলাদের মাধ্যমে নবীর মহব্বত ও তাকওয়া আরও বৃদ্ধি পায়।